সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে করা ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কাটার অভিযোগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাঁকে স্বপদে বহাল রেখেই কয়েকটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রোববার একাডেমিক ভবনের নোটিশ বোর্ডে টাঙানো এক বিজ্ঞপ্তি সূত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রশাসনিক আদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কার্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে টাঙানো হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত একাডেমিক কাউন্সিলে অনেক আগেই নেওয়া যেত। তাহলে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করে কঠিন পরিস্থিতিতে যেতে বাধ্য করা হলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীদের পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণসহ অন্যান্য যাবতীয় একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন কেটে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা সব পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারহানা ইয়াসমিন। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব হোসেন রোববার রাতে বলেন, ‘সিদ্ধান্তটি ২৮ নভেম্বর নোটিশ বোর্ডে সাঁটানো হয়নি। ২১ নভেম্বর আমি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের কপি হাতে পেয়ে স্বাক্ষর করে সেটি ২২ নভেম্বর নোটিশ বোর্ডে সাঁটিয়ে দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের পক্ষ-বিপক্ষ থাকতেই পারে, তারা নানা কথা বলবেই।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও স্থায়ীভাবে বরখাস্তের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলতে থাকে। একপর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা। ২১ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি।
২২ অক্টোবর সিন্ডিকেট বৈঠকে ওই প্রতিবেদনের আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিদ্ধান্ত ছাড়াই সিন্ডিকেট সভা শেষ হওয়ায় আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য কোষাধ্যক্ষ আবদুল লতিফের আশ্বাসে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা।