দেশব্যাপী আলোচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ রোববার। ইতোমধ্যে আদালত পাড়ায় নেওয়া হয়েছে সতর্কতা।দুপুর ১২টায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করবেন।সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূঁঞা যুগান্তরকে বলেন, আমরা ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছি।
আবরার হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া বাংলা ম্যাগাজিনকে বলেন, মামলায় ২৫ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন তাঁরা। হত্যার অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। ১৪ নভেম্বর উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য কাল রোববার দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।
২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর শেরেবাংলা হলের গেস্টরুমে আসামিরা সভা করে বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র আবরারকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। পর দিন রাতে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আবরার নিহতের ঘটনায় তার বাবা মো. বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলাটি করেন।
তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ নভেম্বর আদালতে মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে এ চার্জশিট দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১১ আসামি সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। বাকি ১৪ জনকে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ততার কারণে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘আমার ছেলের খুনের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সবার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড যেন হয়। কেউ যেন খালাস না পায়। একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন হোক, যেন পড়াশোনা করতে এসে কেউ নির্যাতনের শিকার না হয়। কেউ যেন হত্যা করার সাহস না পায়।’
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।আদালত সূত্রে জানা গেছে, আদালতে সাক্ষ্যদানকালে আবরারের বাবা বলেছেন, আসামিরা পরিকল্পিতভাবে তাঁর ছেলেকে ডেকে নিয়ে ক্রিকেট স্ট্যাম্প, লাঠিসোঁটা ও রশি দিয়ে প্রচণ্ড মারধর করেন। ফলে তাঁর ছেলে মারা যান। পরে আসামিরা মরদেহ হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে ফেলে রাখেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহিদুর রহমান জাহিদ বলছেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ তার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তাই তার আসামি খালাস পাবেন।’এই মামলায় ২২ আসামি কারাগার আছে, ৩ আসামি পলাতক রয়েছে। পলাতক আসামিরা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তফা রাফিদ।মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী আছেন মোশাররফ হোসেন কাজল, আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া, আবদুস সোবহান তরফদার, প্রশান্ত কুমার কর্মকার, মিজানুর রহমান, আলমগীর হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও মশিউর রহমান। আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন মাহাবুব আহমেদ, আমিনুল গণী, গাজী জিল্লুর রহমান, আজিজুর রহমান, ফারুক আহমেদ প্রমুখ।
অভিযোগপত্রভুক্ত ২২ আসামি হলেন মেহেদী হাসান রাসেল, মুহতাসিম ফুয়াদ হোসেন, মো. অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, মো. মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম তানভীর, হোসাইন মোহাম্মদ তোহা, মো. আকাশ হোসেন, মো. শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মুয়াজ আবু হুরায়রা, মুনতাসির আল জেমি, অমিত সাহা, ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, মো. শামসুল আরেফিন রাফাত, মো. মিজানুর রহমান ও এস এম মাহমুদ সেতু।