এক্সক্লুসিভজাতীয়বাংলাদেশবিএনপিরাজধানীরাজনীতি

খালেদা জিয়া চরম ক্রান্তিকালে আছেন

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামও বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া ভেরি ক্রিটিক্যাল স্টেজে আছেন’। দলটির অন্য নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া বর্তমানে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। চিকিৎসক সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। হঠাৎ করে তার হিমোগ্লোবিন কমে গিয়েছিল। লিভারের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন পর্যায় চলে যায়।

তাৎক্ষণিক বিএনপি মহাসচিবসহ দলটির বহু নেতা হাসপাতালে ছুটে যান। বর্তমানে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের ভাষ্য— তার শারীরিক জটিলতা কিছুতেই কাটছে না। এ অবস্থায় তার আরোগ্য লাভের ভরসা হচ্ছে বিদেশের কোনো হাসপাতালে যদি সময়মতো ‘অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট’ দেয়া যায়। অন্যথায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনাই বেশি।

‘খালেদা জিয়া কতক্ষণ, আর কয় মিনিট বাঁচবেন সেটি আমি বলতে পারব না। তবে এটুকু বলতে পারি, খালেদা জিয়া চরম ক্রান্তিকালে আছেন, যেকোনো মুহূর্তে চলে যেতে পারেন। তার মুখ দিয়ে রক্তপাত হচ্ছে। ব্লাড প্রেশার একশর নিচে নেমে এসেছে।গতকাল বিকেলে আমি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছিলাম। যা দেখেছি, এর চেয়ে বড় ঘটনা সাম্প্রতিককালে আমার নজরে আসেনি। খালেদা জিয়া কতক্ষণ বাঁচবেন বলতে পারবো না। উনাকে হত্যা করা হচ্ছে।’ খালেদা জিয়াকে সশরীরে দেখে এসে এমন মন্তব্য মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর। 

চলতি সপ্তাহ থেকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সরকারের সাথে মুক্তির আবেদন নিয়ে যান খালেদা জিয়ার পরবারের সদস্যরা। আইনমন্ত্রী সরাসরি নাকচ করে দেন। এরপর এ নিয়ে সংস্কৃতিককর্মীদের বিবৃতি, সাংবাদিকদের একটি অংশের পক্ষ থেকেও বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়ার দাবি জানানো হয়। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের কাছে আবেদন করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের একাংশ। আইনমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন আইনজীবীরা।

দেশের সচেতন মহল থেকেও দাবি উঠেছে, খালেদা জিয়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। দেশের এক শীর্ষ রাজনীতিক, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, একজন নারী হিসেবে উপরন্তু একজন কারাবন্দির যথাযথ সুচিকিৎসা পাওয়া ন্যূনতম মানবাধিকারের অংশ। তার মৌলিক অধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জাতি হিসেবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য। খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে বিদেশে অ্যাডভান্স সেন্টারে নিয়ে চিকিৎসা প্রয়োজন। রাষ্ট্রের কাছে নাগরিক অধিকার পাওয়া খালেদা জিয়ার পাপ্য।

খালেদা জিয়ার বিষয়টি নিয়ে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আট দিনের  কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিএনপি দোয়া মাহফিল, অনশন ও সমাবেশ করেছে। এ নিয়ে বিএনপির এখনো কর্মসূচি চলছে। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলামের কাছে স্মারকলিপি দেয় বিএনপি প্রতিনিধি দল। একইভাবে খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে সারা দেশেও জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটজনক। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় তিন বছর ধরে বন্দি রয়েছেন। এরপর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমরা আগেও বলেছি, তাকে তিলে তিলে নিঃশেষ করতেই বন্দি করা হয়েছে। এর প্রমাণ হলো, তিনি এখন হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছেন।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, ‘খালেদা জিয়া একজন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও একজন নারী। তার শারীরিক যে অবস্থা বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে— তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা এখন আবশ্যক। যদিও তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত এটি অবশ্যই মানবতার ঊর্ধ্বে নয়। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এটি অবশ্যই সমাধানযোগ্য। রাজপথে আন্দোলন করে এর সমাধান করা যাবে না।

আমি দেশের একজন নাগরিক হিসেবে চাইবো সরকার অবশ্যই রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দেবে। কারণ, আমি জানি না খালেদা জিয়ার কোনো অঘটন ঘটে গেলে সরকার এটি ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে দায় এড়াতে পারবেন কি-না। তাই আমি আশা রাখবো, মানবিকতাকে বিবেচনা করে একজন নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করবে সরকার।

Back to top button