বেইলী রোডে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় গুঁড়িয়ে দেয়া সেই চালক তাসকিন শাফী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। গাড়ি চালানোর সময় সে মাদকাসক্ত ছিল কি-না সেটা নিশ্চিত করতে করা হবে ডোপ টেস্ট- এমনটিই জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। রিকশায় থাকা আহত ব্যক্তি বাদী হয়ে গত রোববার রাজধানীর রমনা থানায় একটি মামলা করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তার পুরো নাম তাসকিন আহমেদ শাফী। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মগবাজার এলাকার একটি বাসায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকে। তার বাবা এডভোকেট মো. তারজেল আইনজীবী। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট শাফী।
ঘটনার পরপরই শাফী প্রাইভেটকারটি নিয়ে বাসায় ফিরে যায়। পরদিন শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওই কিশোর তার মা সুমাইয়া শারমীনকে নিয়ে বাসে করে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় তার দাদার বাড়ি চলে যায়। সেখান থেকে আবার চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গায় তার খালার বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপনে থাকে। পরে দুই উপজেলার থানা পুলিশের সহায়তায় গত রোববার ভোরে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া নতুন বাজার এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়।
পরিবারের ছোট সন্তান হওয়ায় কম বয়স থেকেই কিছুটা বেপরোয়া এবং খামখেয়ালি স্বভাবের। হাতিরঝিল সংলগ্ন মগবাজার এলাকায় উঠতি বয়সী বখে যাওয়া একাধিক কিশোর গ্যাং চক্রের সংস্পর্শে এসে বেপরোয়া হয়ে উঠে কিশোর শাফী।
শাফী যে প্রাইভেট কারটি (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৫-২২৬৩) দিয়ে রিকশা গুঁড়িয়ে দেয় সেটি প্রথমে তার বন্ধুর কথা বললেও পরবর্তীতে জানা গেছে তার বাবা আইনজীবী মো. তারজেল সম্প্রতি এই সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়িটি ক্রয় করেন। যেহেতু পুরাতন গাড়ি তাই এখন পর্যন্ত তার নামে গাড়ির কাগজপত্র চূড়ান্তভাবে তৈরি হয়নি।
শাফীর জন্ম ২০০৬ সালে। সে হিসেবে তার বর্তমান বয়স ১৫ বছর। এই বয়সে তার ব্যক্তিগত লাইসেন্স থাকার কথা নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সে রাজধানীর ওই নামকরা স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকলেও করোনার পরপরই তাকে সেখান থেকে ভর্তি বাতিল করে গ্রামের বাড়িতে একটি স্কুলে ভর্তি করা হয়। স্কুল বন্ধ থাকায় ঢাকায় বেশি থাকা হতো তার। গাড়ি চালানোর সময় শাফী মাদকাসক্ত ছিল কি-না সে বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয়নি শাফী। মাদকাসক্ত কি-না নিশ্চিত হতে তার ডোপ টেস্ট করা হবে।
শাফীর মানসিক সমস্যা রয়েছে বলে ইতিমধ্যে পুলিশকে জানিয়েছে শাফীর পরিবার। শাফী হাতিরঝিল এলাকায় বাজি ধরে মোটরসাইকেল স্ট্যান্ড করা, বেপরোয়াভাবে বাইক চালানো, বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের নেশার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সামনে এসেছে। ঘটনার দিন অভিযুক্ত শাফীর সঙ্গে আরও কারা ছিলেন, কাদের সঙ্গে সে চলাফেরা করে সেটাও তদন্ত করে বের করা হবে। তদন্ত সূত্র জানায়, আদরের সন্তান হওয়ায় প্রায় সকল আবদার রক্ষা করার চেষ্টা করেছে তার পরিবার। না চাইতে পাওয়ার বিষয়টি তাকে আরও খামখেয়ালি স্বভাবের করে তোলে। পরিবারের অজান্তেই শাফীর বেপরোয়া ভাব দিনকে দিন বেড়ে চলে।
এ বিষয়ে রমনা জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বাংলা ম্যাগাজিনকে বলেন, এই ঘটনায় অভিযুক্ত কিশোরের সঙ্গে আরও কারা জড়িত আছে এবং তার সঙ্গে কারা চলাফেরা করে সে বিষয়টি তদন্ত করে খুঁজে বের করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানা যাবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিপ্লব সরকার বলেন, গাড়ি চালানোর সময় সে মাদকাসক্ত ছিল কি-না তা নিশ্চিত হতে তার ডোপ টেস্ট করা হবে। আদালতের মাধ্যমে শাফীকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তাকে একদিনের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত।