সাবেক বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর সাবেক বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে বর্তমানে সংযুক্ত আছেন কামরুন্নাহার। তিনি আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় আপিল বিভাগে সশরীর উপস্থিত হন। আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ১ নম্বর ক্রমিকের মামলায় শুনানি নিয়ে তাঁর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহারের আদেশ দেওয়া হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় পরে প্রকাশ হবে।
প্রধান বিচারপতি এর আগে কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করার পাশাপাশি তাকে আর আদালতে না বসার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি আদালত থেকে প্রত্যাহার করে তাকে পাঠানো হয়েছিল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে।তখন জানা যায় স্থগিতাদেশ থাকার পরও অন্য এক ধর্ষণ মামলার এক আসামিকে জামিন দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে আপিল বিভাগ তাকে গতবছর তলব করেছিল।
যে মামলায় জামিন নিয়ে কামরুন্নাহারকে তলব করা হয়েছিল, সেই ফৌজদারি আবেদন ১৫ নভেম্বর ‘রাষ্ট্র বনাম আসলাম সিকদার’ শিরোনামে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ১ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ সেদিন বলেছিলেন, আদেশ দেওয়া হলো। তবে কী আদেশ দেওয়া হয়, তা জানা যায়নি।
গত ১৫ নভেম্বর কামরুন্নাহারের বিষয়টি আবার আপিল বিভাগে ওঠে। এরপর সোমবার সকালে তিনি আদালতে হাজির হন। পরে বিকালে তার বিষয়ে আদেশের কথা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র।সেখানে বলা হয়, “আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে বর্তমানে সংযুক্ত এবং ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর সাবেক বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার অদ্য ২২/১১/২০২১ তারিখ সকাল ৯:৩০ ঘটিকায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগে সশরীরে উপস্থিত হন।
আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরুর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আদালতকক্ষে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মী, আইনজীবী ও আদালতসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করে দেওয়া হয়। এরপর আর কাউকে বিচারকক্ষে ঢুকতে দেখা যায়নি। বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিচারকক্ষে গিয়ে কামরুন্নাহারকে দেখা যায়নি। বেলা সোয়া ১১টার দিকে ভার্চ্যুয়াল আদালতে যুক্ত হলে দেখা যায়, আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ২ নম্বর ক্রমিকে থাকা মামলাটির শুনানি শুরু হয়েছে। পরে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আদেশের বিষয়টি জানান।
২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আসলাম সিকদারের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মামলা করা হয়। মামলায় গত বছরের ১৪ অক্টোবর রায় দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫-এর বিচারক। রায়ে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসলাম সিকদারকে খালাস দেওয়া হয়।ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ১৫ নভেম্বর গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, খালাসের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করেছে। হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন।
কামরুন্নাহার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক ছিলেন। তিনি রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় ১১ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। রায়ে পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেওয়া হয়। ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পুলিশ যেন মামলা না নেয়, সে বিষয়ে আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।
তবে লিখিত রায়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষণ মামলা না নেওয়া বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই।গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের আলোকে এ নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়।১৩ নভেম্বর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধান বিচারপতির কাছে বিচারক হিসেবে কামরুন্নাহারের দায়িত্ব পালন নিয়ে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সে জন্য একটা চিঠি দেবেন তিনি।