ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের প্রথম বর্ষের দুই ছাত্রী র্যাগিংয়ের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন। একই হলের তৃতীয় বর্ষের কয়েকজন ছাত্রীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন তাঁরা।ভুক্তভোগী দুই ছাত্রীর একজনের অভিযোগ, আপত্তিকর গানের সঙ্গে তাঁদের নাচতে বাধ্য করা হয়েছে, পাশাপাশি করা হয়েছে মানসিক নির্যাতন।মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) দিবাগত রাতে এই ঘটনা ঘটে।
গত মঙ্গলবার রাতে রোকেয়া হলের অপরাজিতা ভবনে (এক্সটেনশন চার) ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই দুই ছাত্রী। তাঁদের মধ্যে একজন (ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী) গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানীর কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন। প্রক্টর অভিযোগটি সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদার কাছে পাঠিয়েছেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের জুলি মারমা, তৃতীয় বর্ষের নাসরিন জাহান খুশি, মার্কেটিং বিভাগের জান্নাত নিপো ও রিনাকি চাকমা, দর্শন বিভাগের পূজা দাস। এরা সবাই তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।অন্যদিকে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলেন- ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী আয়েশা আক্তার রিজু।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত দশটার দিকে পাশের (৩) নম্বর রুমের আপুরা (জুলি, নাসরিন) আমার রুমে (৪) আসেন। তখন কিছুক্ষণ গল্প করে চলে গেলেও পরে তাঁরা আবার কক্ষে ফিরে আসেন। এ সময় তাঁদের মধ্যে ভাষা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা হচ্ছিল। একপর্যায়ে তিনি অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে জিজ্ঞাসা করেন, “আমি ভাত খাই”কে তাঁদের ভাষায় (মারমা ভাষা) কী বলা হয়? তখন তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী রেগে গিয়ে তাঁকে বলেন, “তোর তো সাহস কম না! তোকে র্যাগ দিতে হবে।” এ সময় পাশ থেকে জ্যেষ্ঠ ছাত্রীদের আরেকজন বলে ওঠেন, “শুধু ওকে (প্রথম বর্ষের ছাত্রী) নয়, এই ফ্লোরের প্রত্যেককে র্যাগ দিতে হবে।”
রিজু আরো বলেন, জুলি আপু, নিপো আপুকে পাঠিয়ে অন্য রুমের আমার এক সহপাঠীকে নিয়ে আসেন।আমি আইনগতভাবে হলে উঠেছি এই কথা বলায় জুলি আপু বলেন, আবার কীসের প্রশাসন? আমরা থাকতে দিচ্ছি বলেই থাকতে পারিস। তোরা দুই মিনিট ভেবে নে তোরা কি করবি। তোদের আজকে নাচাবো।
‘‘গত মাসের (অক্টোবর) ২৫ তারিখে আমার মায়ের মৃত্যুর পর বাবা মারা যান। আমি সেই কষ্ট এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তার উপরে আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। তারপরও তাদের এই পাশবিক নির্যাতন চলে রাত একটা পর্যন্ত’’ কাঁদতে কাঁদতে বললেন রিজু।এ সময় হুমকি-ধমকি দিয়ে তাঁকে (প্রথম বর্ষের ছাত্রী) ও তাঁর আরেক সহপাঠীকে একটি অশ্লীল গানের সঙ্গে নাচতে বাধ্য করেন জ্যেষ্ঠ ছাত্রীরা। অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে (রাত একটা পর্যন্ত) তাঁদের নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর পাঠিয়ে দিয়েছি। বিষয়টি তিনি (প্রাধ্যক্ষ) দেখছেন।’তবে এ বিষয়ে কথা বলতে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।অভিযোগের বিষয় জানতে জুলি, খুশি, নিপো, রিনাকি ও পূজার সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে তাদেরে পক্ষ থেকে কোন ধরনের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।