আইনের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কারঃ আইনমন্ত্রী
চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর আবেদন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আইনের শাসন যেখানে আছে, সেখানে তিনি যথেচ্ছ করতে পারেন না। বিএনপি যে দাবি করছে, তা আইনের বইয়ে নেই। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ওনারা (বিএনপি) আমাকে যত খুশি গালি দিতে পারেন। তাতে আমার কিছু আসে–যায় না। আমি আইন মোতাবেক চলব।’
বিএনপি’র সাংসদ জি এম সিরাজের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আইনের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। মানবিক কারণে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে ছয় মাস পরে বাড়ানো হয়েছে।বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে অনুমতি দেওয়ার বিধান আইনে নেই মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো দেখিয়েছি যে বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নাই। ওনারা যদি এটা দেখাতে পারেন, তাহলে তো আমরা এটা বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু এটা আইনের বইয়ে নাই। ওনারও দেখাতে পারবেন না, বিবেচনার প্রশ্ন আসে না।’ সরকারি দলের সাংসদেরা তাঁর এই বক্তব্যের সমর্থনে টেবিল চাপড়ান।
আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়াকে সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ৪০১ ধারায় কোনো সুযোগ নেই একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামির নিষ্পত্তিকৃত আবেদন আবার বিবেচনা করার।আইনমন্ত্রী বলেন, ২০০৭-০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিদেশ যেতে দেওয়া হয়েছে, এটা অসত্য। প্রধানমন্ত্রী কখনো সাজাপ্রাপ্ত হননি।
আ স ম আব্দুর রবকে যখন পাঠানো হয়েছিল, তখন দেশে ছিল মার্শাল ল। মার্শাল লর ধারা ফৌজদারি কার্যবিধির ধারার সঙ্গে চলে না। ওনারা যথেচ্ছ করেছেন।আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আইনের শাসন যেখানে আছে, সেখানে আমি যথেচ্ছ করতে পারি না। এটা হচ্ছে প্রকৃত ঘটনা।’আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়াকে সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ৪০১ ধারায় কোনো সুযোগ নেই একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামির নিষ্পত্তিকৃত আবেদন আবার বিবেচনা করার।
এর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে জি এম সিরাজ তাঁর দলের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মানবিক দিক বিবেচনায় দু-এক দিনের মধ্যে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানান। এটি না হলে সংসদ থেকে পদত্যাগ করারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।বিএনপির এই সাংসদ বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো না হলে এবং অবস্থা চরম হলে দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপির পক্ষে এই সংসদে থাকা হয়তো সম্ভব হবে না। খালেদা জিয়ার কিছু হলে এর দায় আওয়ামী লীগকে বহন করতে হবে।
এ বিষয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে জি এম সিরাজ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছিলেন, রাগ–বিরাগের বশবর্তী হবেন না। গতকালের ওনার বক্তব্যের বিষয়ে বিনয়ের সঙ্গে বলছি, ওনার বক্তব্যের সঙ্গে শপথের ভাষা সাংঘর্ষিক। তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইব না, এটা কি সঠিক?’
জি এম সিরাজ বলেন, কোভিডের পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা চরম অবনতি হচ্ছে, যা তাঁকে দিন দিন মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পরিবার থেকে পাঁচবার আবেদন করা হয়েছে। দল থেকে বারবার আবেদন করা হচ্ছে। তাদের আবেদন, খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত জামিন দিয়ে দু-এক দিনের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হোক।
জি এম সিরাজ বলেন, ‘তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কেন বিদেশে যেতে দেওয়া হবে না? এটা তাঁর মৌলিক অধিকার। দেশের মানুষ মনে করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন, তা–ই করতে পারবেন, করেন। সর্বময় ক্ষমতার মালিক তিনি। এটা পাবলিক পারসেপশন।’
বিএনপির এই সাংসদ বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে জামিন নিয়ে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার নজির আছে। ১৯৭৯ সালে আ স ম আব্দুর রব সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও চিকিৎসার জন্য জার্মানি গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা নাসিম দুদকের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছে ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য সুযোগ পান।
জি এম সিরাজ বলেন, ‘আমরা ছয়জন এই সংসদে আছি। আওয়ামী লীগের বন্ধুরা বলেন, এটা এই পার্লামেন্টের জন্য অলংকার। আজকে তাই বলতে চাই, আমাদের সংসদ নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যদি আমরা সত্যি সত্যি অলংকারই হয়ে থাকি, তাহলে পার্লামেন্ট অলংকারবিহীন করবেন না। এ কারণে আমাদের দলীয় সিদ্ধান্তে এমনও হতে পারে, ম্যাডাম যদি চরম অবস্থায় চলে যান, তাহলে হয়তো এই পার্লামেন্টে আমাদের থাকা সম্ভব নাও হতে পারে। আমি এটাকে শর্ত দিচ্ছি না।’