বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তাকে শনিবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা ঠিক কোন পর্যায়ে অবনতি হয়েছে, তা বিশ্লেষণে গতকাল রোববার দু’দফা বৈঠক করেছে মেডিকেল বোর্ড। বৈঠকে বিদেশি কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
বোর্ডের চিকিৎসক সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার শরীরিক সমস্যা ‘অনেক গভীরে’। তার শরীরে বেশ কিছু জটিল সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ করে তার লিভার, কিডনি ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা বেশ প্রকট। এখানকার হাসপাতালে তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। মেডিকেল বোর্ড যত দ্রুত সম্ভব খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। বোর্ডের এমন মতামতের পর সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে নিতে আবারও সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
এর আগে রবিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে চিকিৎসকদলের সদস্য এবং ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান,‘মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী ম্যাডামের চিকিৎসা চলছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, শনিবার বিকেল পৌনে ৬টায় গুলশানের বাসভবন থেকে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর চিকিৎসা বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী চেয়ারপারসনকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন খালেদা জিয়া। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে শনিবার রাতে ও রোববার বিকেলে বৈঠক করে ১০ সদস্যের ওই বোর্ড।
মেডিকেল বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি প্রস্রাব ধরে রাখতে পারছেন না এবং প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন বেরিয়ে যাচ্ছে। হৃদযন্ত্রের স্পন্দন অনিয়মিত হওয়ায় অস্বাভাবিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন তিনি। ক্রনিক লিভার সমস্যায় তার লিভার প্রতিস্থাপনের আগাম পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন।
ব্যক্তিগত একজন চিকিৎসক জানান, সব দিক থেকে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর খালেদা জিয়ার এন্ডোস্কপি করা হয়। পরে রাতেই তাকে কেবিন থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। তার ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য এরই মধ্যে তাকে রক্ত দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কিডনির ক্রিয়েটিনিন বর্ডার লাইন ক্রস করেছে। শরীর প্রচণ্ড দুর্বল। খাওয়া-দাওয়ার রুচিও কম।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বলেছেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তার পরিবার ও দল থেকে বারবার সরকারের কাছে আবেদন করার পরও তাকে বিদেশে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিয়ে এখন জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে সরকার, যা অত্যন্ত দুঃখজনক- দেশের জনগণ এই সরকারকে ছাড়বে না।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হলে খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে পাঠানো হয়।করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার শর্ত সাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এ পর্যন্ত চার দফায় তার মুক্তির সময় বৃদ্ধি করা হয়। যদিও বিএনপির নেতারা এ সাময়িক মুক্তিকে ‘গৃহবন্দী’ বলছেন। খালেদা জিয়ার পরিবার ও দল তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে আসছে।