এক্সক্লুসিভধর্ম ও জীবন

কোরআন পাঠ করে হতাশাময় জীবনে আশার আলো

ফরাসি নাগরিক সামির ইসলাম গ্রহণের আগে প্রচণ্ড রকম মাদকাসক্ত ছিলেন। মা-বাবার বিচ্ছেদ ও ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা তাঁকে এই ধ্বংসাত্মক পথে ঠেলে দেয়। অবশেষে কোরআন পাঠ করে জীবনে আশার আলো খুঁজে পান এবং ইসলাম গ্রহণ করেন।সামির ইসলাম তাঁর নিজের বয়ানে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার সম্পূর্ণ ঘটনা তুলে ধরেছেন।

আমার এক বোন সিরিয়া থেকে ফিরে আমাকে একটি বই দিল। বইটি সে উপহার হিসেবে পেয়েছিল। ইংরেজি ভাষায় লেখা বইয়ের নাম ছিল ‘দ্য বাইবেল, কোরআন অ্যান্ড সায়েন্স’। লেখক প্রমাণ করতে চেয়েছেন, কোরআনে এমন কিছু আছে, যা সে সময়ের মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না। সুতরাং কোরআনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত, তা সংরক্ষিত এবং কোরআন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্য। বইটি কিছুটা পড়ার পর আমার প্রথম অনুভূতি ছিল, এটা একটা চমৎকার বই। 

বইটি শেষ করার পর আমি নিজেকে পরিবর্তন করতে প্রস্তুত হয়ে যাই। তবু তুলনামূলক অধ্যয়নের জন্য কোরআনের একটি অনুবাদ সংগ্রহ করি। গভীর অধ্যয়নের আগেই আমি ইসলাম গ্রহণ করি। আল-হামদুলিল্লাহ! ইসলাম গ্রহণের পর আমি মাদকাসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হই। আল্লাহ আমাকে সুন্দর জীবন উপহার দেন। মানসিকভাবেই আমি পরিতৃপ্ত। বিশেষত কোরআন তিলাওয়াতের সময় আমার মনে যে অনুভূতি জাগে তা যদি কোনো মনোবিজ্ঞানীকে ব্যক্ত করা যেত! 

আমার ইসলাম গ্রহণের পেছনে বিবেক, বুদ্ধি ও আবেগ সব ধরনের কারণ ছিল। আমার মা-বাবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একসঙ্গে লেখাপড়া করেছিলেন। আমার মা ছিলেন একজন ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান। তিনি নাস্তিক থেকে খ্রিস্টান হন। আমার বাবারও ছিল নিজস্ব বিশ্বাস।

যুবক বয়স পর্যন্ত আমি রাজনৈতিক বিষয়ে আগ্রহী ছিলাম। আমি ইতিহাসের বই পড়ে আনন্দ পেতাম। তবে আমি সামরিক ইতিহাস ও রাজনীতি নিয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। আমি নিজেকে কমিউনিস্ট দাবি করতাম। কিন্তু এখন আমি বলব, আমি তার অর্থ জানি না। আমি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত রাজনীতি ও সমাজতন্ত্র নিয়ে লেখাপড়া করেছি। তবে কমিউনিস্ট ব্লকের পতন হলে আমি নিজের ভুলগুলো ধরতে পারি। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো খুব বেশি দিন তাদের আবেদন ধরে রাখতে পারেনি।

 এমন সময় আমার মা-বাবার বিচ্ছেদসহ বেশ কিছু ব্যক্তিগত সংকটের মধ্যে পড়ি। এসব ভুলে থাকার জন্য আমি বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় করতাম, মদপান করতাম এবং গাঁজা ও সিগারেট খেতাম। কখনো কখনো হেরোইন ও এলএসডির মতো মারাত্মক মাদকও গ্রহণ করেছি। এরই মধ্যে আমি ‘ব্যাচেলারিয়েট’ (কলেজের চার বছর শেষে যে পরীক্ষা দেওয়া হয় এবং পাস করলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গ্র্যাজুয়েশন করার অনুমতি পায়) সম্পন্ন করি।

এরপর আমি অজ্ঞেয়বাদী হয়ে গেলাম। তখন ভাবতাম, সব মানুষ তাদের অহংকার ও কিছু প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার কারণে নিন্দার যোগ্য। যেমন স্রষ্টার অস্তিত্ববিষয়ক প্রশ্ন। তখন আমি দর্শনশাস্ত্রও পাঠ করি। আমি চাচ্ছিলাম, অতীতের মতো আমি যেন কোনো ভুল না করি। এই চিন্তা থেকে সব মতবাদ ও ধর্মমত প্রত্যাখ্যান করি।

‘ব্যাচেলারিয়েট’ সম্পন্ন করার পর রাষ্ট্রীয় আইন অনুসারে তখনই আমাকে আর্মিতে যোগ দিতে হয়। এটা আমার জন্য ভালোই হয়। কেননা এতে আমার জীবনে শৃঙ্খলা ফেরে এবং মানসিকতার পরিবর্তন হয়। আল-হামদুলিল্লাহ! 

এমন সময় আমার মা-বাবার বিচ্ছেদসহ বেশ কিছু ব্যক্তিগত সংকটের মধ্যে পড়ি। এসব ভুলে থাকার জন্য আমি বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় করতাম, মদপান করতাম এবং গাঁজা ও সিগারেট খেতাম। কখনো কখনো হেরোইন ও এলএসডির মতো মারাত্মক মাদকও গ্রহণ করেছি।

সামরিক বাহিনী থেকে সাধারণ সমাজে ফিরে আসার পর আমি আরো বেশি অন্ধকার একটি বছর কাটাই। জীবনের মন্দ স্বভাবগুলো আমাকে সব সময় প্ররোচিত করত। সেনা বাহিনীর অভিজ্ঞতা ও বড় বড় অর্জনের পরও জীবনটা খুব ভাসমান বলে মনে হতো। অনুভব করতাম জীবনে ভিন্ন আরো কিছু প্রয়োজন। 

সামির আরো বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর জীবনের মানে আমার কাছে পালটে গেলো। এতদিন আমি যে জীবন কাটিয়েছি, সেটি জীবন নয়, অভিশাপ। আল কুরআন আমাকে হতাশা থেকে আশার আলোর পথে এনেছে আলহামদুলিল্লাহ। 

Back to top button