ব্যান্ডেজের উপর লেখা ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’
আই সি ইউ’তে আকিব। নেই কোনো নড়াচড়া। শনিবার দুপুরের পর থেকে জ্ঞান আসেনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এই শিক্ষার্থীর। পুরো শরীরে প্লাস্টার। ছুরি ও হাতুড়ির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত মাথা। আর তাতে লাগানো ব্যান্ডেজ। ব্যান্ডেজের ওপর বড় বড় হরফে লেখা ‘হাড় নেই চাপ দিবেন না’। বিভিন্ন স্থান থেকে স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা আসছেন দেখতে আকিবকে।তারা যাতে অসতর্ক অবস্থায় হাত না দেন এজন্যই এই বার্তা।আকিবের এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে গেছে। আকিবের জন্য দুঃখ, দোয়া প্রকাশ করেছেন অনেকেই । আর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন হামলাকারীদের ওপর।
মাহাদি জে আকিব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তিনি। গত শনিবার সকালে কলেজের কিছু ছাত্র তাঁর ওপর হামলা করে। মাথায় মারাত্মক জখম নিয়ে ভর্তি হন চমেক হাসপাতালে। আঘাত গুরুতর। অস্ত্রোপচারের পর তাঁর ঠাঁই হয় আইসিইউতে। এর পর থেকে নিথর পড়ে আছেন আকিব। তাঁর মাথায় এমন লেখার রহস্য জানা গেল চিকিৎসকদের কাছে।
অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে থাকা সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুল কাদের বলেন, আঘাত খুব বেশি ছিল। তার মস্তিষ্কে এবং মাথার হাড়ে মারাত্মক আঘাত রয়েছে। মাথার হাড়ের একটা অংশ খুলে আপাতত তার পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়েছে। কিছুটা উন্নতি হলে সেটা আবার আগের জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হবে।
আঘাতের কারণে আকিবের ব্রেনের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমে গিয়েছিল। অপারেশন করে সেগুলো সরানো হয়েছে। এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি। তাই তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। সার্জারি, মেডিসিনসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের নিয়ে ৭ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আশা করছি আকিব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে এই ৪৮ ঘণ্টায় তেমন কিছু বলা যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ছাত্রলীগ নেতা বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেলে ছাত্রলীগ দুই গ্রুপে বিভক্ত। শুধু এই মেডিকেলেই নয় পুরো চট্টগ্রামেই ছাত্রলীগ বিভক্ত। এখানে একবার নাছির গ্রুপের একজন সভাপতি হন একবার নওফেল গ্রুপের। আর ক্যাম্পাসে যেহেতু ভিন্ন কোনো দল শক্ত অবস্থানে নেই তাই তারাই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন প্রায়শই। ছাত্রলীগ এক ব্যানারে অনেক কাজ করলেও আসলে তাদের এই দ্বন্দ্ব প্রকট।
আকিবের বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং থানায়। ছেলের এমন দুঃসংবাদ পেয়ে ছুটে এসেছেন বাবা গোলাম ফারুক মজুমদার ও স্বজন তৌফিকুর রহমান। আইসিইউ এর সামনে স্বজন-বন্ধুরা অপেক্ষা করছেন, আকিব সুস্থ হয়ে ফিরবেন এই বিশ্বাস তাদের। তাঁর বাবা ও ভাই কেবল সবাইকে আকিবের জন্য দোয়া করতে বলেছেন। তবে চিকিৎসকেরা এখনো তাঁকে শঙ্কাহীন বলছেন না।
শনিবার রাতেই তৌফিকুর রহমান বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করেছেন। পুলিশ আকিবের ওপর হামলাকারী দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আকিবের ওপর হামলা হয় কলেজের সামনের সড়কের ফুটপাতের ওপর। পপুলার ডায়াগনস্টিকের সামনের ফুটপাতে। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সাত আটজন তাঁকে ঘিরে ধরে মারছে। মাথায় আঘাত করছে। আকিব শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর পক্ষের বলে জানা গেছে।
পাঁচলাইশ থানার উপ-পরিদর্শক সাদিকুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে অন্যদের আটকের চেষ্টা চলছে।চমেক ছাত্রলীগে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের দুটি পক্ষ সক্রিয় রয়েছে।