স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ১৭ নথি গায়েব
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৭টি নথি খোয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ নিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে মন্ত্রণালয়।শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার প্রথম আলোকে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব বা হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নাদিরা হায়দার একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডি নং ২০/১৭।
আজ থেকে তদন্ত শুরু হবে। কে বা কারা নথি গায়েব করেছেন সেটা খতিয়ে দেখা হবে। পুলিশ সূত্র জানায়, জিডিতে ১৭টি নথির নম্বর ও বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। নথিগুলোর মধ্যে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য মেডিকেল কলেজের কেনাকাটা সংক্রান্ত একাধিক নথি, ইলেকট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি, রিপোর্ট অধিদফতরের কেনাকাটা, ট্রেনিং স্কুলের যানবাহন বরাদ্দ ও ক্রয় সংক্রান্ত নথি রয়েছে।
তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ফাইল খোয়া যাওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবারই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ সুপার মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে ক্রাইম সিন ইউনিট সচিবালয়ে যায়। সিআইডির কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। জিডি করার ৪৮ ঘণ্টা পরও ফাইলগুলো কে সরাল, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি মন্ত্রণালয় বা পুলিশ—কোনো পক্ষই।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সচিবালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শাহাদৎ হোসাইনের কক্ষের লাগোয়া ঘর থেকে নথিগুলো হারিয়ে যায়। শাহাদৎ হোসাইন সচিবালয়ের ৩ নম্বর ভবনের ২৯ নম্বর কক্ষে বসেন। পাশের লাগোয়া ঘরটিতে বসেন ক্রয় ও সংগ্রহ শাখা-২–এর সাঁটমুদ্রাক্ষরিক ও কম্পিউটার অপারেটর মো. জোসেফ সরদার ও আয়েশা সিদ্দিকা। ফাইলগুলো এই দুই কর্মীর কেবিনেটে ছিল।
স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. শাহাদাৎ হোসাইন বলেন, ঘটনা অবহিত হওয়ার পর সচিব মহোদয়ের নির্দেশনায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কাউকে সন্দেহ করছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে যে ১৭টি নথি সরানো হয়েছে সেখানে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত নথি বেশি ছিল।
এখানে শুধু প্রশাসনিক আদেশ দেওয়া হয়। আমার মাথায় আসছে না প্রশাসনিক আদেশ নিয়ে তারা কী করবে। তবে যারা এই নথি সরিয়েছে তারা চাবি দিয়ে তালা খুলে নথি নিয়েছে। যেহেতু চাবি দিয়ে তালা খোলা হয়েছ, সেহেতু মন্ত্রণালয়ের ভিতরের লোকজনের সহযোগিতা থাকতে পারে। আমরা চাচ্ছি যেকোনো মূল্যে সত্য উদঘাটন হোক। আমরা এ ঘটনার আসল আসামি ধরতে চাই। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় যে জিডি করেছে, তাতে বলা হয়েছে, ২৭ অক্টোবর অফিস করে নথিগুলো ফাইল কেবিনেটে রাখা হয়। পরদিন দুপুর ১২টায় কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় ফাইলগুলো কেবিনেটের মধ্যে নেই।যে নথিগুলো খোয়া গেছে, সেগুলোর সিংহভাগই স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের অধীন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিভাগের কেনাকাটা–সম্পর্কিত।
তাছাড়া নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক প্রকল্পের নথি খোয়া গেছে।এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত সচিব শাহাদৎ হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারছেন না।