সালমান সাবেক সৌদি বাদশাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন
সৌদি আরবের বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান ২০১৪ সালে দম্ভ করে বলেছিলেন, তিনি তখনকার বাদশা আবদুল্লাহকে হত্যা করতে পারেন। এ সম্পর্কিত একটি ভিডিওর বিষয়ে জানেন সৌদি আরবের সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাদ আল জাবরি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিবিএস টেলিভিশনের ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে এ দাবি করে বলেন, এ কারণেই তাকে হত্যা করতে চান ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ। অনলাইন ব্লুমবার্গকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি।
সৌদি আরব সরকার বলেছে, আল জাবরি হলেন সরকারের একজন অসম্মানীত কর্মকর্তা। তিনি নিজে যে আর্থিক অপরাধ করেছেন তা ধামাচাপা দেয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে সৌদি আরব সরকারের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারা তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ক ইমেইলের কোনো জবাব দেয়নি।
আল জাবরি বলেন, এখন থেকে চার বছর আগে ক্ষমতার উত্তরাধিকারী হিসেবে সৌদি আরবের ক্ষমতার মূল হয়ে ওঠেন প্রিন্স মুহাম্মদ। তখনই তিনি দম্ভ করে বলতেন, তার কাছে রাশিয়ার একটি বিষাক্ত আংটি আছে। তা দিয়ে তিনি বাদশা আবদুল্লাহর সঙ্গে করমর্দন করলেই তিনি মারা যেতে পারেন।
সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান সংক্ষেপে এমবিএস হিসেবে পরিচিত। তার পিতা বর্তমান বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ। ২০১৫ সালে বাদশা আবদুল্লাহ মারা যাওয়ার পর সিংহাসনে আসীন হন তিনি। তখন থেকেই তিনি সরকারিভাবে দেশের শাসক। অন্যদিকে সাবেক ক্রাউন প্রিন্স ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স মুহাম্মদ বিন নায়েফের ডানহাত ছিলেন আল জাবরি। চাচাতো বড়ভাই ও সাবেক প্রিন্স মুহাম্মদ বিন নায়েফের বিরোধী পক্ষ হয়ে ওঠেন বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স এমবিএস। তার কাছ থেকে কার্যত ক্ষমতা কেড়ে নেন এমবিএস। এরপরই কানাডায় চলে যান আল জাবরি। সেখানেই থিতু হন। নির্বাসনে বসবাস শুরু করেন।
সাবেক ক্রাউন প্রিন্স এবং স্করাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে আল জাবরি সৌদি আরব এবং পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিলেন। বিশেষ করে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়, তারপর এই যোগাযোগ নিবিড় হয়। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) সাবেক উপপরিচালক মাইকেল মোরেল সিবিএস টেলিভিশনকে বলেছেন, সাবেক গোয়েন্দা ভূমিকার মাধ্যমে বহু সৌদি এবং মার্কিনির জীবন রক্ষা করেছেন আল জাবরি।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছিলেন। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ছেড়ে যায় দুটি বোমা বোঝাই বিমান। তিনি সতর্কতা দেন, এর মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল আল কায়েদার। আল জাবরির সতর্কতায় সেই পরিকল্পনা ভন্ডুল করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
আল জাবরি ২০২০ সালে ওয়াশিংটনে একটি ফেডারেল আইনের অধীনে মামলা করেন। এতে অভিযোগ করেন যে, তাকে হত্যা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ‘অপারেটিভ’দের মোতায়েন করেছেন এমবিএস। জাবরিকে হত্যা করতে এমন একটি টিমকে পাঠিয়েছেন এমবিএস। এ ঘটনা ঘটে ওয়াশিংটন পোস্টের সাবেক কলামিস্ট জামাল খাসোগিকে হত্যার কয়েক সপ্তাহ পরে। আল জাবরির দাবি, তাকে হত্যা করতে চান এমবিএস। এর কারণ, তার কাছে যেসব তথ্যপ্রমাণ আছে তা নিয়ে ভীতশঙ্কিত ক্রাউন প্রিন্স। আল জাবরি সিবিএস টেলিভিশনকে বলেন, আমার মনে হচ্ছে একদিন আমাকে হত্যা করা হবে। কারণ, আমাকে হত্যা না করা পর্যন্ত এই ব্যক্তি (এমবিএস) শান্ত হবেন না।