স্ত্রী মিতুকে হত্যা বাবুলের নির্দেশে

সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের নির্দেশেই তাঁর স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্বে ছিলেন কামরুল শিকদার ওরফে মুছা। শনিবার সন্ধ্যায় আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেন আলোচিত এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা।এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ভোলাকে বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের আদালতে তাকে হাজির করা হয়।চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রাম শহরে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এর কিছুদিন আগে থেকে চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাবুল আক্তার। সে সময় কামরুল শিকদার বাবুল আক্তারের তথ্যদাতা (সোর্স) হিসেবে কাজ করতেন। কামরুল শিকদারই বাবুলের সঙ্গে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন বলে এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা জানিয়েছেন।নগরের ডবলমুরিং থানা এলাকায় গুলি করতে যাওয়া এক ব্যক্তির তথ্য বাবুলকে দেন ভোলা। ওই ঘটনার আসামি ধরে বাবুল বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। পরে বাবুলের নির্দেশে কামরুলকে ভোলা তার বালুর ব্যবসায় ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ দেন।

জবানবন্দিতে ভোলা জানান, ২০১৬ সালের মে মাসের দিকে কামরুল ইসলাম শিকদার ভোলাকে বলেন, স্যার (বাবুল) পারিবারিক সমস্যায় আছেন। তার স্ত্রীকে খুন করতে হবে। এ জন্য ভোলা যাতে অস্ত্র সংগ্রহ করে দেন। তখন ভোলা পারিবারিক বিষয়ে না জড়াতে কামরুলকে অনুরোধ করেন। কামরুল বিষয়টি বাবুলকে জানিয়ে দেন।এহতেশামকে শনিবার ভোরে বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে বিকেলে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হলে জবানবন্দি দেন তিনি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

জবানবন্দিতে এহতেশাম বলেছেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করে দেন তিনি। কামরুলও শুরুতে রাজি ছিলেন না। তাঁকে এ কাজ না করলে ‘ক্রসফায়ারের’ হুমকি দিয়েছিলেন বাবুল। যার কারণে কামরুল রাজি হন।২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় খুন হন মাহমুদা খানম। তখন তাঁর স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে গত ১২ মে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। ওই দিন মাহমুদার বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে বাবুলসহ আটজনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই দিনই বাবুল আক্তারকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পিবিআই মামলাটির তদন্ত করছে।

এ ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন বাবুল আক্তার। মামলাটি চট্টগ্রামের নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ৩ বছর ১১ মাস তদন্তে থাকার পর গত বছরের মে মাসে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা।তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। এরপর মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে গত ১২ মে মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন পাঁচলাইশ থানায় এজাহার দায়ের করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা শনিবার রাতে বলেন, জবানবন্দি দেওয়ার পর আসামি এহতেশামকে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন আদালত। হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বদাতা হিসেবে যাঁর নাম এসেছে, সেই কামরুলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এজাহারে সাবেক এসপি মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার, কিলিং স্কোয়াডের সদস্য মো. কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু, ওরফে কসাই কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার ওরফে সাকু মাইজ্যা ও শাহজাহান মিয়াকে আসামি করা হয়েছে। যদিও এদের মধ্যে ২জন পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন এবং বর্তমানে জেলে আছেন ২জন।পুলিশের তথ্যমতে, কিলিং স্কোয়াডের নেতৃত্বদানকারী মুসা পলাতক রয়েছেন।

মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ জুলাই আদালত এহতেশামুলসহ তিন আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। অন্য দুজন হলেন কামরুল শিকদার ওরফে মুছা ও মো. কালু। এদিকে বাবুলের করা মামলায় পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় গত বছরের মে মাসে। এর বিরুদ্ধে বাবুলের আইনজীবী নারাজি আবেদন করেন। ২৭ অক্টোবর নারাজি আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

Exit mobile version