সাবেক যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ ১২ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৮ টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির তথ্যমতে, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসব টাকা পাচার হয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে।
তিনি রোববার বলেন, সিআইডির প্রতিবেদনটি গত জুলাই মাসে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে এসে পৌঁছে। সেখানে পৃথক আটটি মামলায় অর্থ পাচারে জড়িত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের নাম, টাকার পরিমাণ এবং এসব টাকা উদ্ধারে গৃহীত পদক্ষেপ উল্লেখ করা হয়েছে। করোনার কারণে নিয়মিত আদালত না থাকায় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়নি। ইতিমধ্যে হলফনামা করা হয়েছে। অবকাশ শেষে (২০ অক্টোবরের পর) প্রতিবেদনটি হাইকোর্টে দাখিল করা হবে।
সিআইডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, অর্থ পাচারের সাত মামলায় ১২ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান এবং অজ্ঞাত ৪-৫ জনের কথা উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে যুবলীগের সাবেক (বহিষ্কৃত) নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, সম্রাটের অন্যতম সহযোগী এনামুল হক আরমান ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর মোমিনুল হক সাঈদের নাম রয়েছে।
অন্যরা হলেন ফরিদপুরের বোয়ালমারীর রাজীব হোসেন, নেত্রকোনার বারহাট্টার জামাল, কুমিল্লার দাউদকান্দির শরিফুল ইসলাম ও আওলাদ হোসেন, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মো. শাহজাহান , চট্টগ্রামের খুলশীর নাজমুল আবেদীন, সোহেলা আবেদীন এবং পাহাড়তলী এলাকার এ কে এম জাহিদ হোসেনসহ অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজন। এ ছাড়া চট্টগ্রামের এ অ্যান্ড বি আউটারওয়্যার অ্যান্ড নর্ম আউটফিট অ্যান্ড অ্যাকসেসরিজ লিমিডেটের নাম রয়েছে।
মামলাগুলো তদন্তাধীন উল্লেখ করে সিআইডি বলেছে, টাকা উদ্ধারের পদক্ষেপ হিসেবে সংশ্লিষ্ট দেশ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে।প্রতিবেদনে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে ২৩২ কোটি ৩৭ লাখ ৫৩ হাজার ৬৯১ টাকা পাচারের তথ্য এসেছে। খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় ৮ কোটি ৮৩ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯৮ টাকা পাচারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সাত মামলায় সব মিলিয়ে ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৮ টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে সিআইডির প্রতিবেদনে।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন বাংলাদেশি নাগরিক ও কোম্পানির পাচারের মাধ্যমে বিদেশি ব্যাংকগুলো বিশেষত সুইস ব্যাংকে গোপনে জমা রাখা বিপুল অর্থ উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে চলতি বছর হাইকোর্টে একটি রিট করেন দুই আইনজীবী। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।
সুইস ব্যাংকসহ দেশের বাইরে বিদেশি ব্যাংকে অর্থ রাখা ব্যক্তির নাম–ঠিকানা, টাকার পরিমাণ এবং ওই অর্থ উদ্ধারে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে বলা হয়। সেই অনুসারে এই প্রতিবেদন এসেছে বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মানিক জানিয়েছেন।