ব্যবসায়ীকে মারধর করে অপহরণের চেষ্টা
ফিল্মি কায়দায় এক ব্যবসায়ীকে মারধর করে অপহরণের চেষ্টা করেছেন সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান মোশারফ ওমর। গত ১৩ অক্টোবর বিকালে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার সামনেই এ ঘটনা ঘটে। ব্যবসায়ী নূর হোসেন অভিযোগ করেন, তার ক্রয়কৃত জমি থেকে চেয়ারম্যান মোশারফের অবৈধভাবে মাটি কেটে নেওয়ার প্রতিবাদ করায় তাকে মারধর করে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে। এদিকে ওই ব্যবসায়ীকে ফিল্মি কায়দায় রিকশা আটকে মারধর করার সিসি টিভি ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ী নূর হোসেন জানান, ৩ বছর আগে আমি ইউনিয়নের চেঙ্গাইন এলাকায় পৌনে ৭ শতাংশ জমি কিনে সেখানে ভোগদখল করছি। কয়েক দিন আগে আমার জমি থেকে মোশারফ চেয়ারম্যান জোর করে মাটি কেটে নিলে আমি বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের জানাই। তারা সরেজমিন গিয়ে সেই ঘটনার স্থির চিত্র ও ভিডিও ফুটেজ নিলে চেয়ারম্যান মোশারফ আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। গত ১৩ অক্টোবর আমি পুনরায় মাটি কেটে নিচ্ছে- এমন খবর পেলে আমি সেখানে যাচ্ছিলাম এবং বিকালে চেয়ারম্যান মোশরাফ আমার রিকশার গতি রোধ করে আমাকে মারধর করে অপহরণের চেষ্টা করে।
সিসি টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, কাচঁপুর সেতুর ঢাকা-সোনারগাঁ সড়কে হাইওয়ে থানার প্রধান ফটকের সামনে বিকাল ৫টার দিকে ২টি হ্যারিয়ার গাড়ি ব্যবসায়ী নুর হোসেনের রিকশা আটকে দেয়। এ সময় সামনে থাকা সাদা রঙের হ্যারিয়ার থেকে মোশারফ ওমর নেমেই নুর হোসেনকে রাস্তার পাশে নিয়ে আসেন। একমুখী চলাচলের রাস্তাটিতে এ সময় যানজটের সৃষ্টি হলে শত শত মানুষের সামনেই চেয়ারম্যান মোশারফ ব্যবসয়ী নূর হোসনকে বারবার গাড়িতে তুলতে জোর করতে থাকেন।
একপর্যায়ে তিনি নূর হোসনকে মারধর শুরু করেন। নূর হোসেন এ সময় সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে ২ দফায় তিনি ব্যবসয়ী নূর হোসেনকে মারধর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করলে নূর হোসেন আত্মরক্ষায় চেয়ারম্যান মোশারফকে ধাক্কা দিয়ে সামনের দিকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় চেয়ারম্যান মোশারফের সাথে থাকা লোকজন নূর হোসেনকে জাপটে ধরে পুনরায় গাড়িতে তোলার চেষ্টা করেন।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানান এই ব্যবসায়ী। অপরদিকে বিষয়টি নিয়ে তথ্যানুসন্ধানে ওই এলাকায় সরেজমিন গেলে প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুটপাতের কয়েক দোকানি জানিয়েছেন, বুধবার বিকালে সাদা ও কালো রঙের ২টি দামি গাড়ি নিয়ে রিকশায় থাকা ২ জন লোকের গতিরোধ করেন চেয়ারম্যান মোশারফ। এরপর ওই লোকটিকে (নুর হোসেন) বারবার গাড়িতে তোলার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তার ওপর মারধর শুরু করেন চেয়ারম্যান মোশারফ।
এদিকে লিখিত অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাকিব ওই দিনের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে বলে সত্যতা পেয়েছি। তবে চেয়ারম্যানকে বাড়িতে না পেয়ে তার ছোটভাই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বাবু ওমরের সঙ্গে কথা বলে এসেছি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এখানে ব্যবসা করতে হলে আমাদের প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয়। নাম প্রকাশ হলে ফুটপাতে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে অভিযোগ সম্পর্কে চেয়ারম্যান মোশারফ ওমরকে বৃহস্পতিবার গিয়ে এলাকায় পাওয়া যায়নি। একাধিকবার ফোন ও ম্যাসেজ দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে শুক্রবার পুনরায় ফোন ও খুদে বার্তা দিলে তিনি মোবাইলটি বন্ধ করে দেন। তবে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে সোনারগাঁ থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।