৩০টি ই-কমার্স সাইটের ওপর সতর্ক নজর
ই-কমার্স ব্যবসার নামে গ্রাহকদের পণ্য না দিয়ে টাকা লোপাট করা এমন অন্তত ৬০টি প্রতিষ্ঠানের নামে নালিশ জমা পড়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। এর মধ্যে অন্তত ৩০টি প্রতিষ্ঠানের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার আগে চলছে অনুসন্ধান। গতকাল সোমবার দুপুরে সিআইডি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ইমাম হোসেন।
সিআইডির আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে গ্রাহকদের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রিং আইডির এক এজেন্টকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানানো হয়। গত রবিবার রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরের বড়গ্রাম এলাকা থেকে রেদোয়ান রহমান নামের ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রিং আইডির মালিক কানাডাপ্রবাসী শরিফ ইসলাম ও আইরিন ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেবেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে একই ব্যক্তির মালিকাধীন ‘থলেডটকম’ ও ‘উইকমডটকম’ নামের দুটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ছয় কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানানো হয়। সাশ্রয়ী দামে টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান দুটি।
অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সিআইডিও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ শুরু করে। তাতে দেখা যায়, কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে ভুক্তভোগীরা টাকা দিলেও দিনের পর দিন পণ্য ডেলিভারি না পেয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ কর্মকর্তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে ও সিআইডির অনুসন্ধানে ৬০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৩২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান সিআইডির নজরদারিতে রয়েছে। বাংলাদেশে কিছু ভালো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। বাংলাদেশের অনেক নারী, যাঁরা ঘরে থাকেন তারাও ফেসবুকভিত্তিক ই-কমার্স ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আলাদা সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির আরেক অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া রেদোয়ান ২০১৮ সাল থেকে রিং আইডি ব্যবহারকারী ছিলেন। প্রায় আট মাস আগে এজেন্ট হয়ে প্রায় ৬০০ আইডি বিক্রি করেন। এর মাধ্যমে তিনি এক কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ করেন। অস্বাভাবিক ছাড়ে পণ্য বিক্রি এবং ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেনের নামে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ২০০ কোটি টাকা সিআইডির অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক জব্দ করেছে। তবে রিং আইডির হাতিয়ে নেওয়া টাকার পরিমাণ আরো অনেক। সেই টাকা কোথায় জমা আছে তা এখনো অজানা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই প্রতিষ্ঠান টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল, ইলেকট্রিক পণ্য কম দামে বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও অনলাইনে অফার দেয়। এতে আকৃষ্ট হয়ে ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করার শর্তে টাকা দেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু টাকা দেওয়ার পর নির্ধারিত সময়ে পণ্য দেয়নি ‘থলেডটকম’ ও ‘উইকমডটকম’। ৫০ দিন পার হলেও পণ্য সরবরাহ না করে অপেক্ষা করতে বলে প্রতিষ্ঠান দুটি।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দুটির হেড অব অপারেশন নজরুল ইসলামের সঙ্গে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সোহেল হোসেন, ডিজিটাল কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ অনিক, সেলস এক্সিকিউটিভ অফিসার সাজ্জাদ হোসেন ওরফে পিয়াস, কল সেন্টার এক্সিকিউটিভ অফিসার মুন্না পারভেজ ও সুপারভাইজার মাসুম হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন খায়রুল আলম মীর নামের এক ভুক্তভোগী। তিনি এজাহারে অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠানটির অফিসে গেলে আসামিরা বাদীসহ গ্রাহকদের চেক দেয়। সেই চেক নিয়ে গ্রাহকরা ব্যাংকে টাকা তুলতে গেলে ‘অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই’ বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়। প্রতিষ্ঠানটি এভাবে হাজার হাজার লোকের কাছ থেকে মিথ্যা ও চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করে।