লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার হামছাদী কাজির দিঘীর পাড় আলিম মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছয় ছাত্রের চুল কেটে দিয়েছেন সিনিয়র শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির। বুধবার ক্লাস চলাকালীন সময়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে তারা ক্লাস না করেই মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে যায়। এতে ছাত্র ও অভিভাকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর জেলাজুড়ে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা।
ওই মাদ্রাসার দাখিল শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাজমুল আলম ও ফজলে রাব্বীসহ কয়েকজন মোবাইলে বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাদের ইংরেজি ক্লাস চলছিল। এ সময় হঠাৎ করে সিনিয়র শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির স্যার কাঁচি দিয়ে আমাদের ৬ ছাত্রের মাথার চুল কেটে দেন। এ ঘটনার পর ছাত্ররা ক্লাস না করে শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। পরবর্তীতে মাদ্রাসার অন্য শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় ছাত্ররা তাদের ক্লাস শেষ করে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ছাত্র জানায়, ইংরেজি ক্লাসের প্রথম ঘণ্টা পড়ার পর হঠাৎ করে মঞ্জুরুল স্যার আমাদের (ক) শাখার ক্লাসে ঢুকে ছয় ছাত্রের চুল কেটে দেয়। কিন্তু (খ) শাখার কোন ছাত্রের চুল উনি কাটেনি। আমি মাথা ন্যারা করায় চার দিন মাদ্রাসায় যাইনি। পরে স্যার দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেন।
মাদ্রাসার শিক্ষক মঞ্জুরুল কবিরের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি দাখিল শ্রেণীর সকল ছাত্রকে পরীক্ষার আগের দিন চুল কেটে মাদ্রাসায় আসতে বলেছি। ছাত্ররা আমার কথার অবাধ্য হওয়ার কারণে কয়েকজন ছাত্রের চুল কেটে দিয়েছি। আমি ওদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে থাকা ও নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার জন্যই চুল কেটে দিয়েছি। তবে আমি কাউকে কোন হুমকির দেইনি।
ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এসআই কামাল হোসেন বলেন, আজ শুক্রবার দুপুরে ওই মাদ্রাসায় গিয়ে সুপার, চুল কাটা কয়েকজন ছাত্র, তাদের অভিভাবক ও অভিযুক্ত শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলি এবং ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। গত ১৮ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে এ ঘটনায় সুপার বলেছেন শনিবার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
মাদ্রাসা সুপার মাওলানা বালাকাত উল্লাহ বলেন, ঘটনাটি নিয়ে কোনো ছাত্র বা তাদের অভিভাবক অভিযোগ করেননি। আজ শুক্রবার থানার এসআই কামাল হোসেন ঘটনা তদন্ত করেছেন। শনিবার মাদ্রাসায় গেলে ব্যবস্থা নেব।রায়পুরের বামনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাফাজ্জল হোসেন বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমীর হওয়ায় প্রায়ই ছাত্রছাত্রীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন। তার ভয়ে ছাত্র তো দূরের কথা অন্য শিক্ষকরাও নিরুপায় বলে আমি জেনেছি।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী বলেন, এক সাংবাদিকের মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরেছি। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।