দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলের জলে মিশে গেছে তেল , যার জেরে মারা যাচ্ছে একের পর এক সামুদ্রিক মাছ, পাখি। পেট্রোলিয়াম মিশে জলাভূমি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে গেছে। যাকে স্থানীয় কর্মকর্তারা বড়োসড়ো পরিবেশ বিপর্যয় বলে বর্ণনা করেছেন। কীভাবে এতো পরিমাণ তেল জলের সঙ্গে মিশলো তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন উপকূলরক্ষা বাহিনী।
উপকূলের বিশাল এলাকা এখন তেলে আচ্ছাদিত হয়ে আছে , জলাভূমিগুলির পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। হান্টিংটন বিচ পিয়ার থেকে নিউপোর্ট বিচ পর্যন্ত বিস্তৃত একটি এলি অয়েল রিগ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার জেরে এতো বিপুল পরিমান তেল জলে ছিটকে পড়েছে। এই অঞ্চলটিতে আবার বহু মানুষ সূর্যস্নান করতে আসেন।
হান্টিংটন বিচের মেয়র কিম কার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আনুমানিক ১ লক্ষ ২৬ হাজার গ্যালন বা ৩ হাজার ব্যারেল তেল প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় ১৩ বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে । তিনি আশংকা করছেন, এই বিপর্যয়ের ফলে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের বিপুল ক্ষতি হতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ ডিপার্টমেন্ট উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ ধরা আপাতত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে । হান্টিংটন বিচের মেয়র কিম কার জানান , হিউস্টনভিত্তিক অ্যাম্প্লিফাই এনার্জি কর্পোরেশনের (এএমপিওয়াইএন) সহায়ক সংস্থা বিটা অফশোর দ্বারা তেল রিগটি পরিচালিত হয়েছিল। যদিও তাদের কাছ থেকে এই বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে কোনো সদুত্তর আসেনি। এই পরিবেশ বিপর্যয় কীভাবে সংশোধন করা যায় সেই বিষয়ে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র।
মার্কিন প্রতিনিধি মিশেল স্টিল আমেরিকাকে ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একটি চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টিকে একটি বড় দুর্যোগ বলে অভিহিত করে অর্থ সাহায্য চেয়েছেন। অবিলম্বে এই তেল পরিষ্কার করার জন্য ফেডারেল তহবিল থেকে টাকা চেয়ে পাঠিয়েছেন মিশেল স্টিল। মূল্যবান এই ক্যালিফোর্নিয়া উপকূল অঞ্চলকে বাঁচাতে , এখানকার জলজ সম্পদকে বাঁচাতে এসেম্ববলীর ডেমোক্রাট সদস্য কোটী পেট্রি-নরিস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে এই বিপর্যয়ের পর অবিলম্বে ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে ড্রিলিং এর কাজ বন্ধ করতে হবে।
এম্প্লিফাই এনার্জির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্টিন উইলশার লং বিচে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন যে, তেল সরবরাহকারী পাইপলাইনটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং বাকি তেল নিষ্কাশন করা হয়েছে। তিনি বলেন, কতদূর পর্যন্ত তেল ছড়িয়ে পড়েছে তা সন্ধান করে দেখছেন ডুবুরিরা।
পরিবেশগত কঠোর নিয়মের কারণে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে তেলের উত্তোলন কয়েক দশকে চূড়ান্তভাবে হ্রাস পেয়েছে । গভর্নর গ্যাভিন নিউজম বলেছেন যে, তিনি ২০৪৫ সাল পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে তেল খনন বন্ধ করতে চান। ১৯৬৯ সালে সান্তা বারবারা এভাবেই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রায় ৮০ হাজার ব্যারেল তেল ছিটকে পড়ার পর তেল খনন একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এই বিপর্যয় রুখতে বর্তমানে তেল প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিমান থেকে দেখা হচ্ছে কতদূর পর্যন্ত সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে পড়েছে । শ্রমিকদের নিয়োগ করে সমুদ্রের জল পরিষ্কার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত ৩, ১৫০ গ্যালন তেল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা গোটা ঘটনার তদন্ত করে দেখছেন।