জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর মৃত্যুতে ‘শূন্য পদে’ কে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন- এ নিয়ে ইতিমধ্যে দলে আলোচনা শুরু হয়েছে। পার্টির চেয়ারম্যান দলের দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পার্টির চেয়ারম্যান পদে ‘যে কাউকে’ বসাতে পারেন। যদিও দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানা গেছে।
দলের মহাসচিবের মৃত্যুতে ইতিমধ্যে তিনদিনের শোক ঘোষণা করেছে জাপা। এর পরেই দলের পরবর্তী মহাসচিবের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের। যদিও জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ২০/১ (১) ক উপ-ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দলের চেয়ারম্যান তার মনোনীত ব্যক্তিকে মহাসচিব পদে নিয়োগ দিতে পারেন।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয় বাংলা ম্যাগাজিনের। যদিও এদের কেউই গণমাধ্যমে নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার চারজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, জাতীয় পার্টিকে অনেকেই বলে ‘গৃহপালিত পার্টি’।কিন্তু জাপা এই ধারণা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে।
১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি গঠনের পর প্রথম মহাসচিব হন ডা. এম এ মতিন। জিয়াউর রহমান ও আব্দুস সাত্তারের সরকারের এই মন্ত্রী জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে তিন বছর ছিলেন। মতিনকে সরিয়ে এ পদে আসেন অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান, যিনি এর আগে এরশাদ ঘোষিত ১৮ দফা বাস্তবায়ন পরিষদের মহাসচিব ছিলেন। মাহবুব অল্প কিছু দিন দায়িত্ব পালনের পর টাঙ্গাইলের মাহমুদুল হাসানকে মহাসচিব করেন এরশাদ।
১৯৯০ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্র হলে এরশাদ সেনা কর্মকর্তা মাহমুদুলকে সরিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি হয়ে আসা শাহ মোয়াজ্জেমকে বসান মহাসচিব পদে। কিন্তু ওই গণআন্দোলনে পতন ঘটে এরশাদের, কারাগারেও যেতে হয়। এর মধ্যেই ১৯৯২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত মহাসচিব পদে ছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম। শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে বিএনপিতে ফিরে যান শাহ মোয়াজ্জেম।
জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলটি নতুন রূপে মাঠে নামতে চায়। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলটির সাংগঠনিক কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। তাই দলটিকে নতুনভাবে সাজানোর উদ্যোগকে নতুনরূপে দেখতে চাচ্ছেন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের সহ পার্টির শীর্ষ নেতারা। একইসঙ্গে কিছুটা বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
একাদশ জাতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে ২০১৮ সালের ৩রা ডিসেম্বর মহাসচিব পদ থেকে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে দেন জাতীয় পার্টির তৎকালীন চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রুহুল আমিন হাওলাদারের জায়গায় মহাসচিব পদে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে নিয়োগ দেয়া হয়।
ওই সময় মশিউর রহমান রাঙ্গা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। প্রেসিডিয়াম সদস্যের পাশাপাশি জাপা চেয়ারম্যান অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন রাঙ্গাকে। গত বছরের জুলাইয়ে রাঙ্গাকে সরিয়ে দলের মহাসচিব হিসেবে জিয়াউদ্দিন বাবলুর নাম ঘোষণা করেন জিএম কাদের।
জাপা সূত্রে জানা গেছে, দলটির অনেক শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে নজরদারিতে রাখছেন জাপা চেয়ারম্যান। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কিছু করলে তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেয়া হবে। তাই তাদের বিকল্প হিসেবে এরশাদ মুক্তির আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্রনেতাসহ পার্টির মধ্যে ত্যাগীদের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদগুলোয় মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া সুবিধাবাদী নেতাদের দলের কার্যক্রম থেকে দূরে সরানো হচ্ছে।
জাপার মহাসচিব পদে আলোচনায় যারা : মহাসচিব পদে আসতে পারেন- এমন কয়েকজনের মধ্যে এগিয়ে আছেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশিদ, সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে পার্টির বাইরে আছেন জাপার সাবেক চিফ হুইপ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য এইচ এম গোলাম রেজা। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি জি এম কাদেরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পার্টিতে আলোচনায় রয়েছেন।
তৃণমূলে জেলা, উপজেলা, বিভাগীয় শহরের মেধাবী নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সমপ্রতি দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। এদিকে দলকে গতিশীল করতে বেশকিছু কেন্দ্রীয় নেতাকে সক্রিয়ভাবে মাঠে অবস্থান করার নির্দেশও দিয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের।