নজরদারির সিদ্ধান্ত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।  চলতি বছর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল ও কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের পর থেকে খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর খুলছে বিশ্ববিদ্যালয়।এরই মধ্যে খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী ৫ই অক্টোবর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় নজরদারির নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত ২৭ আগস্ট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এখন বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র বিদ্যমান। এখনো বাংলার আকাশে ষড়যন্ত্রের গন্ধ। সতর্ক থাকতে হবে। সামনের দিনে আরও চ্যালেঞ্জ আছে।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি নজরে রাখতে ক্যাম্পাসে বসানো হবে ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরা। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসগুলোতে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরও বলেন দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর একটি গোষ্ঠী উচ্ছ্বসিত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর এখানে যারা উল্লসিত তাদের মতলব কী, উদ্দেশ্য কী- তা বুঝতে হবে।  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি চলছে। ফলে অনেক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এবার মাঠে নামবে, বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরেই তারা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে তারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। ষড়যন্ত্রের প্রস্তুতি নিচ্ছে, শেখ হাসিনার সরকার হটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

গত মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরদের মধ্যে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ২৭শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের সব শিক্ষার্থীর করোনার টিকার অনলাইন নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে তারা সরাসরি ক্লাস শুরু করতে পারবে।

সম্প্রতি এক চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে। এগুলো পুনরায় চালু হওয়ার পর যেন কোনো ধরনের ‘অরাজক পরিস্থিতি’ তৈরি না হয়, সেজন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয় ওই চিঠিতে।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই চিঠিতে ইউজিসিকে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ধরনের ‘জঙ্গিবাদ প্রচার’ হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশপথসহ ক্যাম্পাসের স্পর্শকাতর জায়গাগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনবে।  যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

রাজধানীর বাইরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বলেন, এটা যেহেতু একটা একান্ত বৈঠক ছিল, তাই নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। তবে আলোচনায় বলা হয়েছে- পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তারপরও সতর্কতার খাতিরে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বৈঠকের বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন একটি গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে ইউজিসির সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আমাদের নিজেদেরও নানা ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। সেসব বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে।বৈঠকের সভাপতি ও মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম একটি গণমাধ্যমকে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কী করণীয়- তা ঠিক করতে বৈঠক হয়। 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, নজরদারি- এগুলো হচ্ছে রুটিন ওয়ার্ক। বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, জঙ্গি কর্মকাণ্ড যাতে না হয় এই বিষয়গুলোই নজরে রাখা- এখানে স্পেশাল কিছু না। এই বিষয়গুলো সব সময় নজরদারিতে রাখা হয়। দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলছে এই বিষয়ে ভাইস চ্যান্সেলরদের সঙ্গে মিটিং হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকসু’র সাবেক ভিপি নুরুলহক নুর বলেন, সরকারের মধ্যে ভীতি কাজ করছে কখন একটা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। সরকারপন্থি বুদ্ধিজীবী, বিশ্লেষকরাও সরকারকে বলেছে এই সরকারের হয়তো রাজনৈতিক কোনো চাপ নেই। কিন্তু ছাত্র আন্দোলন সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিতে পারে। সরকার অলিখিতভাবে আগে থেকেই কাজ করছে।

বৈঠক সূত্রের ভাষ্য, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তারপরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং প্রবেশপথসহ ক্যাম্পাসের স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর ব্যাপারে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

Exit mobile version