অপরাধগাজীপুর

পরকীয়ার জেরে বন্ধুর যোগসাজশে শ্বাসরোধে হত্যা

প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ বন্ধু দুই তরুণের। তাঁদেরই একজন অপরজনের সঙ্গে ওই নারীর সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেন তাঁর পরিবারকে। তারা ওই তরুণকে ‘সরিয়ে দেওয়ার’ পরিকল্পনা করে। এরপর খুন হন সেই তরুণ। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন সেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুও।

২০২০ সালের ১০ জুলাই পাবুরিয়াচালা গ্রামের বাড়ি থেকে পাশের বাজারে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হন রাসেল। পরদিন সকালে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে বনের ভেতরে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন রাসেলের বাবা।

পরিকল্পনা মোতাবেক, প্রবাসীর ওই স্ত্রীর মাধ্যমে ফোনে রাসেলকে টেক গজারি বনে যেতে বলা হয়। ওই নারীর কথা বিশ্বাস করে ঘটনাস্থলে যান রাসেল। সেখানে বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুললে রাসেলের সঙ্গে রানা, হেলাল এবং কাউছারের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তিনজন মিলে রাসেলের গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁরা রশিতে ফাঁস লাগিয়ে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখেন।

গাজীপুরের শ্রীপুরে দুই বছরের বেশি আগের এক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এসব কথা জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। খুন হওয়া তরুণের নাম মো. রাসেল (১৯)। তিনি উপজেলার পাবুরিয়াচালা গ্রামের জমির আলীর ছেলে।

আজ শুক্রবার দুপুরে পিবিআইয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাসেল হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তিনজনকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করেছে তারা। তাঁরা হলেন পাবুরিয়াচালা গ্রামের মো. আইয়ুব আলীর ছেলে মো. রানা (২২), আ. হকের ছেলে মো. হেলাল (৪৫) ও মো. মুক্তার হোসেনের ছেলে মো. কাউছার (২৩)।

পিবিআই জানায়, গাজীপুর জেলা পুলিশ ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই হত্যা মামলার তদন্ত করে। এরপর পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলার তদন্তভার পায় গাজীপুর পিবিআই। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সংস্থাটির পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলামকে।

তদন্তকালে পিবিআই জানতে পারে, গ্রেপ্তার হওয়া কাউছারের এক নিকটাত্মীয়ের স্ত্রীর সঙ্গে খুন হওয়া রাসেলের সম্পর্ক ছিল। কাউছারের ওই নিকটাত্মীয় বিদেশে থাকেন। একটা সময় ওই নারীর সঙ্গে রাসেলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রানারও সম্পর্ক তৈরি হয়। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। রানা একপর্যায়ে কাউছারের কাছে ওই নারীর সঙ্গে রাসেলের সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেন। এরপর কাউছার পরিবারের মান-সম্মানের কথা বিবেচনা করে রাসেলকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে রানা ও হেলালের সঙ্গে আলোচনা করেন।

গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, পিবিআই মামলাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করে ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মাধ্যমে ঘটনার ১৪ মাস পর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে তারা। গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনকে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হয়। তাঁরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রবাসীর ওই স্ত্রীকেও আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।

Back to top button