কর্নেল আসলাম বেগ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জিয়াকে একটি চিঠি দেয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘খালেদ মোশাররফ যখন আহত হয়ে যান, তখন মেজর হায়দার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার হয়নি। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে তো একটা সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, সেক্টর কমান্ডার নয়।আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি মিডিয়া বা টক শো দেখে দেশ পরিচালনা করেন না। তিনি দেশ পরিচালনা করেন অন্তর থেকে। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে তিনি দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন, এগিয়ে নেবেন।দীর্ঘ বক্তব্যে তিনি বিএনপি আমলের ব্যর্থতা এবং বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন। কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু তাকে খেতাব দিয়েছেন। তা সবই সত্য। কিন্তু তার অবদানটা কী? মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কর্নেল আসলাম বেগ তাকে চিঠি লিখেছিল। ওই চিঠি আমার কাছে আছে। এই সংসদে সেটা তুলে ধরব। সংসদের প্রসেডিংসের পার্ট হয়ে থাকা দরকার। কর্নেল আসলাম বেগ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জিয়াকে একটি চিঠি দেয়, সেই চিঠিতে সে লিখেছিল আপনি খুব ভালো কাজ করছেন। আমরা আপনার কাজে সন্তুষ্ট। আপনার স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনাকে ভবিষ্যতে আরও কাজ দেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দারিদ্র্য ৪০ ভাগ ছিল ২০ ভাগে নামিয়েছে। করোনায় কিছু মানুষ কাজ পাচ্ছে না। কিন্তু একেবারে না খেয়ে কেউ নেই। দারিদ্র্যের হার বাড়তে পারে, কিন্তু ২০ ভাগ থেকে ৪০ ভাগ হয়ে গেছে এটা ঠিক না। তিনি বলেন, করোনার মধ্যেও রেমিট্যান্স বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। গড় আয়ু বেড়েছে। বিএনপির সময় রিজার্ভ ছিল ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। আজকে ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ।
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদের থেকে এখন মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়। জ্ঞানের কথা শুনতে হয়। আইনের শাসনের কথা শুনতে হয়। আমার বাবা-মার হত্যার বিচার চেয়ে আমি মামলা করতে পারিনি। আমাদের সেই অধিকার ছিল না। হ্যাঁ, আমাদের দলের বেঈমান তো ছিলই। খন্দকার মোস্তাক তো ছিলই। এটা তো অস্বীকার করি না। আমাদের বাড়ির ভাত কার পেটে না গেছে। জিয়াউর রহমান তো খালেদা জিয়াকে নিয়ে মাসে একবার করে আমাদের বাড়ি গিয়ে বসে থাকতো।’
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। বিশ্বব্যাংক বা কেউ এখানে দুর্নীতির প্রমাণ করতে পারেনি। এখন পদ্মা সেতু দৃশ্যমান, মেট্রোরেল দৃশ্যমান। ঢাকাজুড়ে মেট্রোরেল ও যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে বলছেন স্বাস্থ্য খাত একেবারে শেষ হয়ে গেছে। আগের সঙ্গে তুলনা করলেই হয়। দেশের অনেকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ চলে যেতেন। করোনার কারণে অনেকে এবার যেতে পারেননি। দেশে চিকিৎসা করতে হয়েছে। দেশে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল দেখে তাদের চক্ষু চড়কগাছ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই যাতে করোনার টিকা পায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভ্যাকসিনের কোনো সমস্যা নেই। ২৪ কোটি ডোজ টিকা কেনা হবে। টিকা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। দেশেও টিকা উৎপাদন করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের লাশের নামে চট্টগ্রাম থেকে একটি বাক্স সাজিয়েগুজিয়ে আনা হয়েছিল। ওই বাক্সে জিয়াউর রহমানের লাশ ছিল না।’ এ বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধা মীর শওকত ও তৎকালীন সেনাপ্রধান মরহুম রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্বীকার করেছেন বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে কথা উঠছে। আমি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর সংবাদের পরে তার লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। গায়েবানা জানাজা হয়েছিল। কয়েকদিন পরে একটি বাক্স আনা হলো। এখানে কেউ একটা বুদ্ধি দিয়েছে, আর জেনারেল এরশাদ তো এই বিষয়ে বেশি পারদর্শী। সাজিয়েগুজিয়ে একখানা বাক্স নিয়ে এসে দেখানো হলো।’
তিনি বলেন, ‘তখন এই পার্লামেন্টে বার বার প্রশ্ন এসেছে, যদি লাশ পাওয়া যায় তার ছবি থাকবে না কেনো? লাশ শনাক্ত করেছিল মীর শওকত। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে চিনতাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সত্যি কথা বলেন তো? বলেছিলেন লাশ কোথায় পাব? এমনটি জেনারেল এরশাদ সাহেব, তাকে আমি বললাম, আপনি যে একটা বাক্স আনলেন? লাশটা কই? আমাকে বললেন, বোন লাশ পাব কোথায়? আর কী বলব।’
মুজিবর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের দেওয়া ঘর নিয়ে দুর্নীতি বা অনিয়মের তদন্ত চালু রাখার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত বন্ধ করবে কেন? তাদের তো তদন্ত বন্ধ করার কথা নয়। তাদের তদন্ত চালু রাখতে হবে। তদন্ত করে দেখতে হবে, যারা ঘর ভেঙেছে, তারা কারা, তাদের উদ্দেশ্য কী। ৩০০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিটি তদন্ত তাদের করতে হবে এবং রিপোর্ট দিতে হবে।