‘জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা নন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি’ সংসদে বলা এসব কথা সংসদের কার্যপ্রণালী থেকে এক্সপাঞ্জের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ।‘ তিনি পাকিস্তানের দোসর হিসাবে ছিলেন’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে সংসদে দেয়া এমন বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার দাবি করেছেন বিএনপি দলীয় সাংসদ হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। মাঠে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন। তাকে নিয়ে যে অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন তা এক্সপাঞ্জ করতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে একটি আইন প্রণয়নের সময় জনমত যাচাইয়ের উপর বক্তব্য দিতে গিয়ে এই দাবি জানান তিনি। এর আগে সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। অবশ্য এক্সপাঞ্জ দাবির প্রশ্নে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কোনও মন্তব্য করেননি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বীরত্বের সাথে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। যেখানে ২৮৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত বরণ করেছেন। এই সেক্টরের দুজন বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। এরা হলেন সিপাহী হামিদুর রহমান ও নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ।’
এমপি হারুনুর রশীদ বলেন, বাংলাদেশে যুগের পরে যুগ ধরে ইতিহাস বিকৃতির যে চর্চা চলছে, তা এই আইনের মাধ্যমে রোধ করতে পারবো কিনা? কারণ এই সংসদে আসার পরে দেখেছি বাংলাদেশের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা যে বক্তব্য উপস্থাপন করছেন; যে উনি মুক্তিযোদ্ধাই না। উনি পাকিস্তানের দোসর। এখানে অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন যিনি ওনার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন।
এ সময় সংসদে হারুনুর রশীদের বক্তব্য নিয়ে হইচই শুরু হয়। অন্যদিকে তাকে দেওয়া নির্ধারিত সময়ও শেষ হয়ে যায়। তারপর স্পিকার তাকে এক মিনিট সময় দেন।তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা না, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি- এগুলো সংসদে বলা হয়েছে। এগুলো সংসদের কার্যপ্রণালী থেকে এক্সপাঞ্জ করতে হবে। এগুলো অসত্য। এগুলো যদি আপনি এক্সপাঞ্জ না করেন তাহলে সংসদে আমাদের কথা বলে লাভ কী? আমি মনে করি, যেখানে ন্যাশনাল আর্কাইভসের মুক্তিযুদ্ধের দলিল রচিত হয়েছে, তার মধ্যে কি জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে লিপিবদ্ধ নাই? তাহলে আজকে আমরা এ সমস্ত কথা কেন বলছি? এগুলো আমি মনে করি পরিহার করা উচিত।’
পরে বিলের সংশোধনীর আলোচনায় অংশ নিয়ে হারুন বলেন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ তার বক্তব্যে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ১৯৭৯ সালে সংসদ ছিল, সেখানে আওয়ামী লীগও ছিল। মানিক মিয়া এভিনিউতে যে জানাজা হয়েছিল, তাতে সাংসদরা উপস্থিত ছিলেন। শোক প্রস্তাবের ওপর সংসদে দীর্ঘ আলোচনায় তারা অংশ নিয়েছিলেন। সেগুলো প্রসেডিংসের মধ্যে রয়েছে। আমার কথায় যদি অপ্রাসঙ্গিক থাকে তা এক্সপাঞ্জ করুন। তিনি বলেন, কারও যদি অপমৃত্যু হয় তাহলে তার ময়না তদন্ত লাগে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে লাশের ময়না তদন্ত হয়েছে। সামরিক আদালতে বিচারও হয়েছে। এটা অসত্য কিছু নয়। আজকে জেনারেল এরশাদ বেঁচে থাকলে তিনি লজ্জা পেতেন। লজ্জা পেয়ে মুখ ডাকতেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ন্যাশনাল আর্কাইভকে আরও শক্তিশালী করার জন্য যে আইনটি আনা হচ্ছে। আমি আশা করব এর মধ্য দিয়ে আমাদের জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করবো, সংরক্ষণ করবো এবং এটিকে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবো।’