খালেদা জিয়া দিন দিন শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্বল হয়ে পড়ছেন। ঘরের মধ্যেও তাকে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হচ্ছে। গণমাধ্যমকে এ কথা বলেছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চাইলে ডা. জাহিদ বলেন, ‘দিন দিন চেয়ারপারসন দুর্বল হয়ে পড়ছেন। উন্নত চিকিৎসার অভাবে দিনের পর দিন তার দুর্বলতা বাড়ছে। আগে বাইরে বের হলে হুইল চেয়ার লাগত। এখন ঘরের মধ্যেও হুইল চেয়ার লাগে। দুই থেকে তিনজন তাকে সহযোগিতা করে। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে পারলে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে পারত।’
কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক স্বজন বলেন, ‘এখন তার অফুরন্ত সময়। পত্রিকা পড়ে, টিভি দেখে সময় কাটান। সময় পেলে লন্ডনে তার বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, নাতনি জাইমা রহমান, ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই মেয়ের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলেন। এভাবেই দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান তিনি।’
খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘চিকিৎসকদের নির্দেশে এখনো আমরা গুলশানের বাসভবনে যেতে পারছি না। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়ার পর কয়েক দিন জ্বর ছিল। তাছাড়া খাওয়াদাওয়া ঠিকভাবে করতে পারছেন না। এ কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছেন বলে মনে করছি। বাসায় তার ব্যক্তিগত স্টাফ ফাতেমা ছাড়াও একজন নার্স ও প্রয়াত কোকোর বাসায় ব্যক্তিগত স্টাফ এ তিনজন হুইল চেয়ারে উঠিয়ে চলাফেলা করান। তার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর দোয়া চাই আমরা।’
তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কি না জানতে চাইলে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ওষুধ খাইয়ে তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এছাড়া নিয়মিত থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। চেয়ারপারসনের এখন যে বয়স তাতে তার চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য স্বজনদের সঙ্গ দরকার। বিশেষ করে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে হাসিখুশি থাকতে পারলে শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উন্নতি হতো। বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে আমাদের পরামর্শে দেশের স্বজনরাও তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় যাচ্ছেন না। স্বজনহীন ব্যক্তিগত স্টাফদের নিয়ে তাকে সময় কাটাতে হচ্ছে।’
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথমে নিজ বাসায় চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া। এরপর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয় ২৭ এপ্রিল। পরে ৫৪ দিন চিকিৎসার পর তাকে আবার গুলশানের বাসভবনে নিয়ে আসা হয়। তখন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এফএম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘হাসপাতালে খালেদা জিয়া কিছু জীবাণু দিয়ে সংক্রমিত হচ্ছিলেন। আমরা তার রক্ত পরীক্ষা করে বুঝতে পেরেছি। এ সংক্রমণ তার বর্তমান স্ট্যাবল (স্থিতিশীল) অবস্থাকে বিনষ্ট করতে পারে। এ আশঙ্কায় তাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও গেল দুদিন কিছু নার্স, ডাক্তার, স্টাফ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন।’
করোনা-পরবর্তী নানা জটিলতায় আক্রান্ত হলে খালেদা জিয়াকে ২৭ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসার জন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। ছয় দিন পর (৩ মে) তিনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পরে অবস্থার উন্নতি হলে এক মাস পর ৩ জুন চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে কেবিনে ফিরিয়ে আনা হয়। এর আগে ১৪ এপ্রিল গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন তিনি। করোনামুক্ত হন ৯ মে।