গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘আমি চাকর-বাকরের কাছে ক্ষমা চাইছি। এ রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের চাকর-বাকরের গুণাবলিও নেই।’আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসব কথা বলেন৷ ছাত্র অধিকার পরিষদের নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচিতি সভা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে সবাইকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নব গঠিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমার সাম্প্রতিক বক্তব্যে আমার কিছু রাজনৈতিক স্নেহাস্পদ ব্যক্তি মনক্ষুণ্ন হয়েছেন। তাদেরকে চাকরবাকরের সঙ্গে তুলনা করেছি। আমি চাকর-বাকরের কাছে ক্ষমা চাইছি। কারণ এসব রাজনৈতিক কর্মীদের চাকরবাকরের গুণাবলিও নেই। তাদের না কবজিতে জোর আছে, না মাথা ঘুরাবার অধিকার আছে। চাকরবাকরদের অত্যাচার করার একপর্যায়ে তারা চাকরি ছেড়ে চলে যায়। এই রাজনৈতিক কর্মীদের তাও নেই। চাকরবাকর ভাইয়েরা আপনাদের কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি, আপনাদের অধিকার আমি ক্ষুণ্ন করেছি। আবার এই বর্তমান সরকার চক্রান্ত শুরু করেছে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে।
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমি তারেক রহমানের জায়গায় জাইমা রহমানকে ক্ষমতা দিতে বলিনি। বলেছি, তাঁকে (জাইমা) রাজনীতি শিখতে দিন, রাজপথে আসতে বলেন। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে হলে রাজপথে হাঁটতে হয়। অনেকে আমার কথায় কষ্ট পেয়েছেন বলে দুঃখিত। আমার বয়স হয়েছে, এটা একদম সঠিক। কিন্তু কথায় কথায় আমাকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয় না। কারণ আমার সততা ও সাহস। আমি জনগণের পক্ষের লোক, আমার অন্য কেউ নেই।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের হাইকোর্টে এখনো কয়েকজন ভালো লোক আছেন। তার মধ্যে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম একজন। একজন মহা দুর্নীতিবাজকে ডেকে এনে, চা খাওয়াইয়ে তাকে জামিন দিয়ে দেয়। তাই তাকে ভর্ৎসনা করে সাধুবাদ জানাই। ইনায়েতুর রহিম কার ভয়ে আপনি এত নরম সুরে কথা বলছেন? আপনার বাবা তো সাহসী লোক ছিল। বিচারপতিগণ কোন বইতে কার বক্তৃতা পড়াবেন সেটার সিদ্ধান্ত দেওয়া কি আপনার কাজ? তাহলে এনসিটিবি কী জন্য রেখেছেন? তার কারণ হলো আপনাদের চোখে ছানি পড়েছে। যে সকল বিষয়ে কথা বলার জন্য আপনারা টাকা পান, সেসব বিষয়ে কথা বলেন না। কথা বলেন কার বক্তৃতা ছাপাবেন, কাকে তেল দেবেন, কাকে মালিশ করবেন। বিচারপতিদের সময় ফুরিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন জাফরুল্লাহ।
প্রবীণ চিকিৎসক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান জাফরুল্লাহ আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার আবার ভয়ানক চক্রান্ত শুরু করেছে। গণতন্ত্রকে হত্যা করে ভোটকে নতুন পদ্ধতিতে সর্বস্বান্ত করতে চাইছে। এখন সজাগ না হলে, বুদ্ধিজীবীদের সবাইকে সংগঠিত না করা হলে গণতন্ত্রের কবর তো হচ্ছেই, মাফিয়া রাষ্ট্রেরও জন্ম হচ্ছে। আমরা কেউ শান্তিতে থাকতে পারব না৷ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে৷ দেশে কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে৷’
আসিফ নজরুল সম্পর্কে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীর জ্ঞানী-গুণীদের নাম খুঁজে বেড়ালে আসিফ নজরুলের নাম পাওয়া যাবে। আসিফ নজরুলের কক্ষে তালা লাগানো যাবে কিন্তু মুখে তালা লাগানো যাবে না। আসিফ নজরুলের জ্ঞানের আঁধারে তালা লাগানো যাবে না। পৃথিবীর যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় আসিফ নজরুলকে অধ্যাপক হিসেবে পেলে গর্বিত হবে। আর আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যক্কারজনক ঘটনা তার কক্ষে তালা লাগানো হয়েছে। এটিই দেখে বোঝা যায়, আমাদের দেশের অবস্থা কতটা খারাপ আছে।
সভায় অংশ নিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি অভিযোগ করেন, ‘এখন যে শাসনে আমরা আছি, তা অদৃষ্টপূর্ব৷ খুব কঠিন ও জটিল পরিস্থিতিতে জনগণকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে৷ রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও কর্তাব্যক্তিদের পয়সা খাইয়ে এই শাসনের অংশীদার করে ফেলা হয়েছে৷ সুবিধাভোগী সবাই এই শাসন টিকিয়ে রাখতে চাইছে৷ এই ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করতে হলে ছাত্রসমাজের উত্থান প্রয়োজন৷ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি৷’
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক বলেন, ‘মানুষ যখন আগামী নির্বাচন নিয়ে সরব হয়েছেন, তখন বিএনপিসহ বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর ধরপাকড় শুরু হয়ে গেছে৷ এই সরকার আতঙ্কিত বোধ করছে৷ সময় ঘনিয়ে আসছে—এটা বুঝতে পেরেছে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য মুগুরের ব্যবস্থা করতে হবে৷ জীবিত থাকতে বিনা ভোটের নির্বাচন হতে দেব না৷