হ্যাটট্রিকে গোলে পেলের রেকর্ড ভাঙলেন মেসি

সারাজীবন কম কথা শোনেননি। বার্সেলোনার হয়ে যেমন নিজেকে উজাড় করে দেন, নিজের দেশের হয়ে ঠিক তেমনটা করতে দেখা যায় না, আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মেসি বার্সেলোনার মতো সপ্রতিভ নন, জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নামলে খেলা ভুলে যান মেসি – আরও কত কী!

একাই দলকে জিতিয়েছেন, এরচেয়ে বড় আনন্দের আর কী হতে পারে! কিন্তু পেলের রেকর্ড ভাঙায় এবারের আনন্দের মাত্রাটা যেন সব ছাড়িয়ে গেল।বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোরে স্তাদিও মনুমেন্তালে বলিভিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের শুরুতেই দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুটি গোল করে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন মেসি।

বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে বলিভিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। ম্যাচে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়দের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বলিভিয়া। কিংবা বলা যায়, ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষকে একাই উড়িয়ে দিয়েছেন লিওনেল মেসি। অসাধারণ এক হ্যাটট্রিকে দলকে বড় জয় এনে দিয়েছেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। এই ম্যাচে ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলেকে ছাড়িয়ে গেছেন মেসি। 

নিন্দুকদের মুখ যে আগেও বন্ধ করেননি, তা নয়। এবার সমালোচকদের থামাতে যা করে দেখালেন, তা করতে বিশ্বের প্রায় সব খেলোয়াড় শুধু স্বপ্নই দেখবেন। বলিভিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে জাতীয় দলের হয়ে নিজের গোলসংখ্যা ৭৯ তে নিয়ে গেলেন মেসি। ছাড়িয়ে গেলেন ব্রাজিলের হয়ে ৭৭ গোল করা পেলেকে। কনমেবলের ইতিহাসে এত বেশি গোল আর কারওর নেই।

কতোটা তৃপ্তি মিলেছে, ম্যাচ শেষে তা জানিয়েছেন মেসি। উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মনুমেন্তালে এই রেকর্ডটা উদযাপন করতে পারছি, এর থেকে ভালো কিছু হতে পারে না। আমার মা ও ভাই মাঠে আছে, তারা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। তারা আজ আমার জন্য উদযাপন করছে, আমি অনেক খুশি।’

মেসির হ্যাটট্রিকেই ৩-০ গোলে জিতেছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচশেষে আনন্দের আতিশয্যে মেসির চোখে আবেগের বান ডাকল যেন। চোখ দিয়ে টপটপ করে পড়তে থাকল পানি। কেউ যদি এখনও মনে করেন, আর্জেন্টিনার হয়ে মেসি নিজের শতভাগ দেন না, হ্যাটট্রিকের দৃশ্যটার পাশাপাশি এই ছবিটাও তাঁদের সমালোচনার জবাব হয়েই থাকবে বহু বহু যুগ।

রেকর্ডটি নিজের করে নেওয়ার স্বপ্ন ছিল মেসির, তাই এমন বাধবাঙা উচ্ছ্বাস তার। আর্জেন্টিনা অধিনায়ক বলেন, ‘আমি আসলেই এই মূহূর্তটা উপভোগ করতে চেয়েছি। আমি এই রেকর্ডটা নিজের করে নিতে চেয়েছি। রেকর্ডটা ভাঙার স্বপ্ন দেখেছি। অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে রেকর্ডটা আমার হয়েছে। অসাধারণ এক মূহূর্ত এটা।’

বাছাইপর্বে বহুদিন পর নিজেদের মাঠে খেলতে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। করোনার ভয় কাটিয়ে মাঠে ফিরেছিলেন দর্শকও। আজ মনুমেন্তালে যারা গিয়েছিলেন, পয়সা উসুল করেই বাড়ি ফিরেছেন। মেসি কী আর বারবার পেলেকে টপকাবেন!

ম্যাচ শেষের সাক্ষাৎকারেও মেসির গলা দিয়ে উপচে পড়ল আবেগ। ম্যাচ দেখতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন মেসির মা, ভাই। তাঁরাও সরাসরি সাক্ষী হয়েছেন এই ইতিহাসের। মেসি আবেগপ্রবণ হবেন না-ই বা কেন! নিজের মাঠে এই উদযাপনটা করতে পেরে মেসি নিজেও খুশি, ‘মনুমেন্তালে এই রেকর্ডটা উদযাপন করতে পারছি, এর থেকে ভালো কিছু হতে পারে না। আমার মা ও ভাই স্ট্যাডে আছে, তাঁরা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। তাঁরা আজ আমার জন্য উদযাপন করছে। আমি অনেক খুশি।’

Exit mobile version