সাত কোটি টাকা পাওনা আদায়ের অংশ হিসেবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিকে গত সোমবার আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে পণ্য বিলিকরণ প্রতিষ্ঠান পেপারফ্লাই। প্রতিষ্ঠানটি ইভ্যালির গ্রাহকদের কাছে পণ্য বিলি করে এলেও সাত মাস ধরে কোনো টাকা পাচ্ছিল না।
পেপারফ্লাইয়ের রেভিনিউ অ্যাশিউরেন্স ম্যানেজার ফাররিন মনসুর বলেন, পেপারফ্লাই বেশ কিছুদিন ধরে ইভ্যালিকে ডোরস্টেপ ডেলিভারি সার্ভিস দিচ্ছে। তবে বকেয়া আদায় করার জন্য আমরা একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। তাছাড়া, নানাভাবে চেষ্টার পরও ইভ্যালির আমাদের কোনো প্রশ্নের জবাব না দেওয়ায় আমরা এখন কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
পেপারফ্লাইয়ের মতো অনেক ব্যবসায়ীই ইভ্যালির কাছে টাকা পান বলে জানা গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া ইভ্যালির হিসাব অনুযায়ী, ব্যবসায়ীদের কাছে ইভ্যালির দেনা ২০৫ কোটি টাকার বেশি। আর গ্রাহকেরা ইভ্যালির কাছে পান ৩১১ কোটি টাকা।তবে কতটি মার্চেন্ট এর কাছে কোম্পানিটির এই দেনা সৃষ্টি হয়েছে, কিংবা কতদিনের মধ্যে দেনা পরিশোধ করবে ইভ্যালি- সে সম্পর্কে কিছুই বলেননি তিনি।
মার্চেন্টদের পাওনা কতোদিনের মধ্যে পরিশোধ করার পরিকল্পনা রয়েছে-তা জানতে যোগাযোগ করা হলে, এ প্রশ্নের কোন জবাব দেননি মোহাম্মদ রাসেল। বরং মার্চেন্টদের কাছে এই পরিমাণ দেনাকে ‘স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য’ বলে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন তিনি।
ইভ্যালির দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত ইভ্যালির মোট দায় ৫৪৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির কাছে চলতি সম্পদ ছিল মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। এই সম্পদ দিয়ে কোনো অবস্থাতেই কোম্পানিটি দায় পরিশোধ করতে পারবে না বলে প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়।
বিপুল ডিসকাউন্টের লোভ দেখিয়ে ৭ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারির প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে ইভ্যালি অগ্রিম টাকা নিলেও তাদের পণ্য সরবরাহ করেনি।গত বছরের ডিসেম্বর মাসে অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করা অনেক গ্রাহক এখনও পণ্য পাননি। ইভ্যালি যেসব গ্রাহকদের রিফান্ড চেক দিয়েছে, ব্যাংক একাউন্টে টাকা না থাকায় সেগুলোও বাউন্স হচ্ছে।
পেপারফ্লাইয়ের আইনি নোটিশের বিষয়ে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল বুধবার রাতে বলেন, ‘আমাদের কাছে পেপারফ্লাই সাত কোটি টাকা পায়, এটা ঠিক। এ টাকা আমরা দিয়ে দেব।’ কবে দেওয়া সম্ভব, এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট সময় বলা যাচ্ছে না। আমরা তো ব্যবসা করছি। ফলে বেশি সময় লাগবে না।’
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইভ্যালি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নথি চেয়ে বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে।এছাড়াও জালিয়াতি বা আত্মসাতের তদন্ত চলমান থাকায় ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং তার স্বামী ও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।