বিতর্কিত বৌদ্ধ সন্ন্যাসী অশিন উরাথুর মুক্তি
কঠোর জাতীয়তাবাদী এবং মুসলিম বিরোধী বহুল বিতর্কিত বৌদ্ধ ভিক্ষু, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিন ‘ফেস অব টেরর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল, সেই অশ্বিন উইরাথু’কে মুক্তি দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। কি কারণে মুক্তি দেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি সামরিক জান্তা। মুসলিম বিরোধী কড়া বক্তব্যের জন্য তিনি সবার কাছে পরিচিত। এর আগে অং সান সুচির বেসামরিক সরকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি।
মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে এর আগে তার ২৫ বছর জেল হয়েছিল। মিয়ানমারের সামরিক সরকার তাকে জেলে ঢুকিয়েছিল। মাত্র ৭ বছর জেল খাটার পর সূচি ক্ষমতায় এসে তাকে মুক্ত করেন। কারণ তিনি তখন সূচির কাছের মানুষ ছিলেন বলে গুঞ্জন আছে।
তিনি মুসলমানদের, বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার। রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করার জন্য পেছনের কলকাঠি মূলত তিনিই নেড়েছেন।তিনি নিজেকে ‘বৌদ্ধ লাদেন’ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি সেনাবাহিনীপন্থি র্যালিতে অংশ নিয়েছেন এবং জাতীয়বাদী বক্তব্য দিয়েছেন।সমালোচনা করেছেন অং সান সুচি ও তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি নেতৃত্বাধীন সরকারের। বেসামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা উসকে দেয়া এবং অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তারপর থেকেই তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। অবশেষে গত বছর নভেম্বরে কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
টাইম ম্যাগাজিন ২০১৩ সালের জুলাই সংখ্যার প্রচ্ছদ করে তাকে নিয়ে। শিরোনাম ছিল ‘দ্য ফেস অব বুদ্ধিস্ট টেরর’ অর্থাৎ একজন বৌদ্ধ সন্ত্রাসীর মুখ।২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে বেসামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ‘ঘৃণা ও অবমাননা’ উস্কে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।এরপর উরাথু পালিয়ে যান। গত বছরের নভেম্বরে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। তারপর থেকে বিচারের অপেক্ষায় কারাবন্দী ছিলেন।
সোমবার সামরিক সরকার জানায়, তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, তিনি একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শরীরের অবস্থা কেমন তা এখনও জানা যায়নি।
বিবিসি লিখেছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ সহিংসতায় উস্কানি দেয়ার জন্য অভিযুক্ত উইরাথু। ৯৬৯ আন্দোলনের শীর্ষ ও সুপরিচিত নেতাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। উল্লেখ্য, ৯৬৯ আন্দোলন হলো বৌদ্ধদের জাতীয়বাদী একটি আন্দোলন। এতে নিজেদের দোকান, সম্প্রতি বিক্রি এবং বিয়ে নিজস্ব ধর্মের ভিতর করার আহ্বান জানানো হয়। জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে তখন অনলাইনে উইরাথুর ধর্মীয় বক্তব্য শোনার জন্য হাজার হাজার ভক্ত যোগ দিতেন অথবা তারা তার র্যালিতে যোগ দিতেন।
তার বিরুদ্ধে মিয়ানমারে মুসলিম ও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়। তিনি ৯৬৯ সালের আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন। ৯৬৯ একটি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন যা বৌদ্ধদের তাদের নিজস্ব ধর্মের মধ্যে কেনাকাটা, সম্পত্তি বিক্রি এবং বিয়ে করার আহ্বান জানায়।
২০১২ সালে রাখাইন প্রদেশে মুসলিম, প্রধানত রোহিঙ্গা এবং বৌদ্ধদের মধ্যে মারাত্মক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি বক্তৃতা দিয়ে জনসাধারণের দৃষ্টিতে আসেন।২০১৭ সালে মিয়ানমারের সর্বোচ্চ বৌদ্ধ কর্তৃপক্ষ এক বছরের জন্য তার প্রচারণা নিষিদ্ধ করে। ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে ২০১৮ সালে ফেসবুক তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়।মিয়ানমারে বৌদ্ধরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।