২২ বছর পর ‘মৃত’ আমেনা’র দেশে ফেরা

বগুড়ার আমেনা খাতুন (৮০) নামে এক নারী নিখোঁজ হওয়ার ২২ বছর পর নেপাল থেকে দেশে ফিরেছেন। আজ সোমবার দুপুর ১টার দিকে তিনি নেপালের একটি বিশেষ বিমানে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন। সরকারি সহযোগিতায় বিনা খরচে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

প্রায় ২২ বছর আগে বগুড়ার ধুনট উপজেলার মাজবাড়ি গ্রামের আমেনা খাতুন নিখোঁজ হন। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাননি স্বজনেরা। তাঁরা ধরে নেন, আমেনা মারা গেছেন। বহু ঘটনার পর আজ সোমবার তিনি নেপাল থেকে দেশে ফিরলেন। বেলা একটার দিকে একটি ফ্লাইটে করে তিনি বাংলাদেশে পৌঁছান। আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁকে তাঁর স্বজনদের কাছে দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আমেনার নাতি আদিলুর রহমান আদিল। দীর্ঘ কয়েক বছর তার কোনো খোঁজ না পাওয়ায় তার সন্তানদের ভোটার আইডিতে মায়ের নামের আগে মৃত উল্লেখ করেছেন।

বেলা একটার দিকে ভাড়া করা বিশেষ বিমানে আমেনা খাতুন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এর আগে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমেনাকে বিদায় জানান সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী।

আমেনার নাতি আদিল বলেন, ‘আমেনা খাতুন প্রায় ৪০ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে তার আগে তিনি আমজাদ হোসেন, ফটিক মিয়া ও ফরিদ মিয়া নামে তিন ছেলের জন্ম দেন। এরপর তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। পরে আম্বিয়া নামে তার আরেক মেয়ের জন্ম হয়। ১৯৯৮ সালে ফটিক মিয়া সৌদি আরবে যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকায় আসেন। এই সময়ে আমেনা খাতুনও বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এরপর আর তার কোনো খোঁজ মেলেনি। তখন থেকে আমরা ধরেই নিয়েছিলাম হয়তো তিনি মারা গেছেন।’

আমেনার স্বামী মৃত আজগর আলী প্রামাণিক পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে আমজাদ হোসেনের বয়স ৬০ বছর, মেজ ছেলে ফটিক হোসেনের বয়স ৫৮ বছর, ছোট ছেলে ফরাজুল হোসেনের বয়স ৫৪ বছর ও ছোট মেয়ে আম্বিয়া খাতুনের বয়স ৪৫ বছর।

গত রোজার ঈদের আগে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) লোকজন আমেনা খাতুনের সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, আমেনা নেপালে রয়েছেন। এরপর তার ছবি দেখান তারা। ছবি দেখে আমেনা খাতুনের সন্তানেরা তার পরিচয় নিশ্চিত করেন। এরপর গত শুক্রবার নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর মাসুদ আলম আমেনার সন্তানদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন। ভিডিও কলে আমেনা তার সন্তান ও স্বজনদের চিনতে পারেন।

মাকে আনতে তাঁরা চার ভাইবোন ও স্বজনেরা মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকায় এসেছেন। যে মা সবার কাছে মৃত হয়ে গিয়েছিলেন, সেই মাকে এত বছর পর ফিরে পাওয়ার আনন্দ-অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়, বললেন তিনি।

নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর মাসুদ আলম গত শনিবার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘নেপালে ২২ বছর পর মায়ের সন্ধান পেলেন বগুড়ার আমজাদ হোসেন প্রামাণিক। ২২ বছর আগে বগুড়ার ধুনটের আমেনা খাতুন বাড়ি থেকে অভিমান করে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তার তিন ছেলে এক কন্যা সন্তানেরা তাকে খুঁজে না পেয়ে ধরে নিয়েছিলেন যে তাদের মা আর বেঁচে নেই। তাদের ভোটার আইডিতে মায়ের নাম পূর্বে মৃত উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত আমেনা বয়স এখন প্রায় ৮০ বছর। তার বড় ছেলে আমজাদ হোসেনের বয়স এখন ৬০ বছর।’

নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার মো. মাসুদ আলমের ইস্যু করা চিঠির সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ৩০ মে নেপালে বাংলাদেশি দূতাবাস আমেনা খাতুনের সন্ধান পায়। তিনি নেপালের সুনসারি জেলার ইনারোয়া শহরে বাসাবাড়ি ও হোটেলে কাজ করতেন। বার্ধক্যের কারণে তিনি কাজ করতে না পেরে রাস্তাঘাট ও ফুটপাতে অবস্থান করছিলেন। পরে ইনারোয়া পৌরসভার কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে সুনসারি জেলা প্রশাসনের সেফ হাউসে রাখেন। নেপালের এক ব্যক্তি তাঁর ফেসবুকে বিষয়টি পোস্ট করেন। ওই পোস্টে তিনি আমেনাকে বাংলাদেশি বলে উল্লেখ করেন। পোস্টটির কমেন্টে নেপালে বাংলাদেশ ইয়ুথ কনক্লেভের চেয়ারম্যান অভিনাভ চৌধুরী বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় বগুড়ার ধুনটে তাঁর পরিবারের খোঁজ মেলে।

তিনি আরও বলেন, ‘সম্পূর্ণ সরকারি খরচে নেপাল থেকে এই বৃদ্ধ অসহায় নারীকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে পাঠানোর বিষয়টি বর্তমান সরকারের তার দেশের নাগরিক ও প্রবাসে অসহায় মানুষে প্রতি দ্বায়িত্ব ও এবং কর্তব্য পালনের একটি উজ্বল দৃষ্টান্ত।’ আমেনার নাতি আদিল বলেন, আজ সোমবার দুপুরে দাদিকে বিমানবন্দর থেকে নিয়ে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছি আমরা।

আমেনা খাতুনকে দেশে আনতে বিমানভাড়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।মাসুদ আলমের দক্ষতা ও বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতার কারণে ওই নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনা গেছে।

Exit mobile version