সার্ভিসিংয়ের আড়ালে ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও পর্নো সাইটে বিক্রি
মো. সুমন মিয়া। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকতেন কলাবাগান এলাকায়। ওই এলাকায় মোবাইল এবং ইলেকট্র্রনিক ডিভাইস মেরামতের আড়ালে বিভিন্ন নারী গ্রাহকদের ব্যক্তিগত ছবি এবং ভিডিও চুরি করে একটি নির্দিষ্ট সময় পর তা বিভিন্ন পর্নো সাইটে বিক্রি করে দিতেন।পরবর্তীতে টার্গেটকৃত নারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন দফায় দাবি করতেন মোটা অঙ্কের টাকা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঊর্ধ্বতন পদে কর্মরত এক নারী রাজধানীর কলাবাগানে অবস্থিত একটি কম্পিউটার সার্ভিসিংয়ের দোকানে গত কয়েক বছর ধরে নষ্ট মোবাইল এবং ল্যাপটপসহ অন্যান্য ডিভাইস নিয়মিত মেরামত করতে দিতেন।
ওই কর্মকর্তার মোবাইল এবং ল্যাপটপ নষ্ট হলে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে সার্ভিসিংম্যান সুমনকে ফোনে বাসায় ডেকে সার্ভিসিং করতে দেন। পরবর্তীতে একমাস পরে সেগুলো সার্ভিসিং শেষে বাসায় এসে দিয়ে যায় সুমন। এর কিছুদিনের মধ্যেই ওই কর্মকর্তাকে মেইলের মাধ্যমে হুমকি দিয়ে সুমন জানায়, তাকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে।
না হলে ওই নারী ১৫ থেকে ২০টি বিয়ে করেছেন এটা বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিউজ প্রকাশ করবেন। পরবর্তীতে সেটা তার অফিস কর্তৃপক্ষকে দেয়া হলে তিনি তার কর্মস্থল থেকে চাকরিচ্যুত হবেন। এ সময় ওই কর্মকর্তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে একটি লিংক আসে। লিংকে ক্লিক করতেই নিজের ছবিসহ একটি পর্নো সাইটে কলগার্ল হিসেবে দেখে রীতিমতো হৃদক্রিয়া বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা তার।
টার্গেটকৃত নারীদের কাছ থেকে বিভিন্ন দফায় দাবি করতেন মোটা অঙ্কের টাকা। সুমনের টার্গেটকৃতদের মধ্যে দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী, গৃহবধূসহ অনেকেই ছিলেন। সম্প্রতি এক ভুক্তভোগী কর্মকর্তার অভিযোগের ভিত্তিতে সুমনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এ সংক্রান্ত তথ্য দিয়েছে সুমন।
ইতিমধ্যে প্রতারক সুমন বিভিন্ন পর্নো সাইটে ওই কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ছবি এবং মুঠোফোন নম্বর পাবলিক করে দেয়। অশালীন একটি আর্টিকেল লিখে তার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিতজনদের কাছে পাঠাতে থাকেন। এরপর একের পর এক ফোন আসতে থাকে নারী কর্মকর্তার ফোন নম্বরে।
ইতিমধ্যে তার প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে কর্মস্থলের একাধিক সদস্য জেনে যায়। এ সময় অনেকটা দিশাহারা হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী নারী কর্মকর্তা। সামাজিক মর্যাদা হারানোর ভয়ে কোনো উপায় না দেখে একপর্যায়ে ওই নারী কর্মকর্তা আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে সুমনের কাছে আরো একাধিক নারীর ব্যক্তিগত ছবি এবং ভিডিও থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক লাখ টাকা। এছাড়া তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে অর্থ দাবি করতেন সুমন। সূত্র জানায়, সুমন তার টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে মানসিকভাবে পরাস্ত করতে ভুক্তভোগীর প্রতিবেশী কারো সঙ্গে যেকোনো উপায়ে সখ্যতা গড়ে তুলতেন। পরবর্তীতে প্রতিবেশীদের কাছে সরাসরি এসব তথ্য ও ছবির কথা বলে দেয়ার হুমকি দিয়ে হাতিয়ে নিতেন অর্থ।
এ বিষয়ে গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার শরীফুল ইসলাম বলেন, যতই বিশ্বস্ত এবং পরিচিত হোক না কেন ব্যক্তিগত যেকোনো ধরনের ডিভাইসে নিজস্ব ছবি, ভিডিও এবং তথ্যসহ মেরামত করতে দেয়া যাবে না। প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য অন্যত্র সরিয়ে রেখে মেরামত করতে দিতে হবে। একইসঙ্গে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেইলসহ সকল ধরনের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার শেষে অবশ্যই লগআউট করে রাখতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দীর্ঘ প্রায় অর্ধ যুগেরও বেশি সময় ধরে সুমন সার্ভিসিংয়ের নামে এই প্রতারণা করে আসছেন। ভুক্তভোগীদের অনেকেই সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ায় ভয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করে না।