বিউটি পার্লার বন্ধ
গত মাসে যেদিন তালেবানরা কাবুল দখল করেছে, সেদিন থেকেই রাজধানী শহরটিতে বিউটি পার্লারের সামনে থাকা নারী মডেলদের ছবি কালো রং দিয়ে মুছে ফেলা শুরু হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব বিউটি পার্লারও। এখন নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায় আছেন এসব দোকানে কাজ করা নারীরা। এক নারী জানান, তার মতো নারীরা তালেবানের টার্গেটে আছেন।
তালেবানরা কোনোভাবেই নারীদের অনাবৃত মুখ বা প্রদর্শিত ঘাড় দেখা অনুমোদন করবে না। তারা সবসময় নিজেদের বিশ্বাসে স্পষ্ট যে, একজন নারীর বাইরে মনোযোগ আকর্ষণ করা উচিত নয়। এটাই আফগানিস্তানে সৌন্দর্য শিল্পের সমাপ্তি।’
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাবুলের একটি বিউটি পার্লারে কাজ করতেন আফসুন (ছদ্মনাম)। ২০ বছর বয়সী এই নারী পেশাটিতে নিজের ক্যারিয়ার গড়ারও স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু গত ১৫ আগস্ট সকাল ১০টায় তার এক সহকর্মীর ফোনকলে সবকিছু শেষ হয়ে যায়।ফোনকলে ওই নারী সহকর্মী জানান, ‘আজ এসো না। আমরা বন্ধ (বিউটি পার্লার) করে দিচ্ছি, সব শেষ।’
এরপরই বিছানায় বসে নিজের মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম স্ক্রল করতে থাকেন আফসুন। বন্ধু, পরিবার ও অন্যান্যদের কাছ থেকে অসংখ্য বার্তা পান। সব বার্তায় প্রায় একইরকম কথা। কাবুলে প্রবেশ করেছে তালেবান এবং আগামী ১৬ দিনের মধ্যে (৩১ আগস্ট) সব বিদেশি ও কূটনীতিকদের আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যেতে হবে। ‘এটি শেষ। নিজেই নিজেকে বলছিলেন আফসুন। এটি লুকানোর সময় ছিল।’
কাবুলে অন্যান্য বিউটি পার্লারের মতো আফসুনের দোকানের বাইরেও নারী মডেলদের গ্লামারাস ও মার্জিত ছবি দিয়ে সাজানো। আর ভেতরে সব বয়সী নারীদের জন্য সুন্দর জায়গা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে তারা সেখানে আসেন এবং সৌন্দর্য দিয়ে নিজেদের সাজিয়ে তুলেন।
নিজেকে একজন আধুনিক আফগান নারী হিসেবে বর্ণনা করেন আফসুন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন, মুভি দেখেন, গাড়ি চালাতে পারেন এবং ক্যারিয়ার নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। ৯০ এর দশকে যখন তার জন্ম হয় এবং তালেবান ক্ষমতায় ছিল, সে সময়কার কথা তার মনে নেই। তবে তিনি এমন আফগানিস্তানে বেড়ে উঠেছেন যেখানে বিউটি পার্লার একটি সাধারণ ব্যবসা। মার্কিন ও বিদেশি বাহিনী আসার পর গত দুই দশকে কেবল কাবুলেই দুই শতাধিক বিউটি পার্লার গড়ে উঠেছে। এর বাইরে দেশটির অন্যান্য অঞ্চলেও এমন অসংখ্য রয়েছে।
আফসুন বলেন, আমি নারীদের পছন্দ করি। আমি কাজ করতে এবং সুন্দর জায়গা বানাতে চাই। যেখানে নারীরা মুক্ত এবং উজ্জল হতে পারবে। পাশাপাশি স্থানটি পুরুষদের থেকে দূরে থাকবে।কিন্তু ১৫ আগস্ট তালেবানরা কাবুল দখল করার পর থেকে তার এত বছরের পরিশ্রম নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে।
মধ্যরাতে কাবুলের একটি গোপন স্থান থেকে ফোনের মাধ্যমে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেন আফসুন। সে ভয় পাচ্ছিল। ওইদিনই (১৫ আগস্ট) তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান এবং এই স্থানে আশ্রয় নেন।তিনি বলেন, ‘বিউটি ইন্ডাস্টির নারীরা, বিশেষ করে আমার মতো যারা কাজের জন্য বাইরে পরিচিত তারাই তালেবানের প্রধান টার্গেট।