দুই গ্রামের মানুষের যোগাযোগের সুবিধার জন্য দুই দশকের বেশি সময় আগে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দুই পাশের সংযোগ সড়ক না থাকায় এক দিনের জন্যও সেতুটি ব্যবহার হয়নি। আজ শুক্রবার সকালে ইটবোঝাই একটি নৌকার ধাক্কায় সেতুটি ভেঙে পড়েছে।
দীর্ঘ ২২ বছরেও সংযোগ সড়ক না হওয়া আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ- কৃষ্ণনগর গ্রামের নয়াখালের ওপর নির্মিত সেতুটি ভেঙে গেছে। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে একটি ইট বোঝাই নৌকার ধাক্কায় সেতুটির মাঝখান দিয়ে পুরোপুরি ভেঙে যায়।
স্থানীয়রা জানান, সকালে জেলার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ডিজিটাল ব্রিকফিল্ড থেকে ৭ হাজার ইট বোঝাই করে আখাউড়া উপজেলার ঘোলখার এলাকায় যাওয়ার পথে মাঝি নৌকাটির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি। এতে করে নৌকাটি সেতুর পিলারে ধাক্কা লাগলে সেতুটি ভেঙে নৌকার ওপরেই পড়ে। ইটসহ নৌকাটি পানিতে ডুবে যায়। এ সময় নৌকায় থাকা শাহবাজপুর ইউনিয়নের রাজবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল খালেক (৪৫) ও হবি (৪২) এই দুই শ্রমিক আহত হয়।
এলাকাবাসীর দাবির মুখে ১৯৯৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া) আসনের তৎকালীন সাংসদ শাহ আলম সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। আখাউড়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয় (এলজিইডি) নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছিল। উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বি সেতুটির দুই গোড়ায় মাটি নেই। সেতুটি সমতল থেকে অন্তত ১৫ ফুট উঁচু। এতে সারা বছর চারপাশে পানি থাকায় ২২ বছর সেতুটিতে কেউ কখনো ওঠানামা করেনি।
প্রত্যক্ষ্যদর্শী বনগজ পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মো. আরমান খান জানান, আমি দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি, নৌকাটি সেতুর পিলারে ধাক্কা মারে। এতে সেতুটি ভেঙে পড়ে যায়। আমি দৌঁড়ে কাছে এসে দেখি নৌকায় থাকা লোকজন বের হয়ে আসছে।নৌকার মাঝি মো. রফিক জানায়, আমরা শাহবাজপুর থেকে ইট নিয়ে ঘোলখার যাওয়ার পথে এই সেতুর নিচে আসার পর এখানে প্রবল স্রোতে নৌকার মাথাটা সেতুর পিলারে ধাক্কা লাগে। সাথে সাথে সেতুটি ভেঙে পড়ে।
তবে সেতুটি নিয়ে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। এলজিইডির জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৭ মিটার বা ৭৭ ফুট। সেতুর প্রস্থ ছিল ৬ ফুট। ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে স্বল্প যানবাহন ও হেঁটে চলাচলের জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় ব্যক্তিদের মতে, সেতুটির দৈর্ঘ্য ১২০ ও প্রস্থ ৮ ফুট। তৎকালীন স্থানীয় সাংসদ টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ নিয়ে ৪০ লাখের বেশি টাকা খরচ করে সেতু নির্মাণ করেন।
ধরখার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাছির মো. আরিফুল হক বলেন, সেতু নির্মাণের আগে রাস্তা নির্মাণ করতে হয়। কিন্তু এখানে ঘটেছে উল্টোটা। আগে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। পরে আর রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। দুই বছর আগে একটি কর্মসূচি দিয়ে সেখানে ছয় লাখ টাকা ব্যয় করে মাটি ফেলেছিলেন। কিন্তু বন্যার পানি সেই মাটি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আর বর্তমান মাটির রাস্তা থেকে সেতুটির উচ্চতা প্রায় ১৫ থেকে ১৮ বা ২০ ফুট হবে। এই সেতু কোনো কাজে আসেনি।
এলজিইডির আখাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল লতিফ জানান, ইউএনওর মাধ্যমে সেতুটি ভেঙে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলামকে পাঠানো হয়েছে। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।