দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করাই বিএনপির জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তিনি বলেন, ‘এখন বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, দেশে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা এবং গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা।
আজকে যে ৩৫ লাখ মানুষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ৫শ’ উপর আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে, সহস্রাধিক নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। এই অবস্থার পরেও বিএনপি অত্যান্ত দৃঢ়ভাবে নিজেদের পায়ের উপর দাড়িয়ে আছে।’
দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার দুপুরে চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এই দীর্ঘ ৪৩ বছরে বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমূল ও মৌলিক পরিবর্তন এনেছে। এক দলীয় স্বৈরাচার শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন করেছে। পরবর্তীতে গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতিশাসিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এসেছে।’
প্রশ্ন ছিল, আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, জিয়াউর রহমানের কবরে তাঁর লাশ নেই। জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা জাতির দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার ঘোষক বীর উত্তম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে এ ধরনের কথা বলা হয়। এটা দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছু না। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, জিয়াউর রহমান জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। তাঁর ঘোষণা মধ্য দিয়ে এ দেশে স্বাধীনতা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। সুতরাং তাঁকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অস্তিত্ব চিন্তা করা যায় না।’
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন মরদেহ আছে কি না, তা প্রমাণ করতে। জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ওনার চ্যালেঞ্জ ওনার নিজেকে গ্রহণ করতে বলেন। উনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সেটা উনি প্রমাণ করুক। লেট হিম প্রুভড, হি ওয়াজ দ্য ফ্রিডম ফাইটার।’
তিনি বলেন, রাজনীতিতে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার ফলে বাক স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার এবং সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা যে হরণ করা হয়েছিল। সেগুলোকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের কাঠামো তৈরি করেছিলেন। আজকে বাংলাদেশের অর্থনীতির যেটুকু অগ্রগতি হয়েছে, তার ভিত শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতেই স্থাপিত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের প্রতিষ্ঠাতার মাজারে আসতে নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া হচ্ছে, বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, “আমাদের লজ্জা হয়, দুঃখ হয়। আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে আমরা যখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে আসি তখন আমাদেরকে বাধা দেওয়া হয়। আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালানো হয়। আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। আজকে এখানে ৩০ জনের বেশি আসা যাবে না বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এই এলাকায় নাকি আরো বড় নিরাপত্তা বলয়ে চলে গেছে। তারা সম্পূর্ণভাবে বাধার সৃষ্টি করছে।”
কবরে জিয়াউর রহমানের মরদেহ আছে কি না, সে বিষয়ে কথা বলতে রুচিতে বাধে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এগুলোর উত্তর দেওয়াটা আমাদের পক্ষে কঠিন, ছোট মনে করি। নিকৃষ্ট, রুচিতে বাধে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর সবাই ভেবেছিল যে বিএনপি বোধ হয় শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তাঁর যোগ্য উত্তরাধিকারী খালেদা জিয়া স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের পতাকাকে তুলে ধরেছিলেন। তিনি দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই করেছেন। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। দুর্ভাগ্য এই জাতির, আজকে সেই নেত্রী ফ্যাসিবাদের নির্যাতনের, তাদের বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখলের কারণে এবং তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার কারণে তিনি কারাবন্দী, অন্তরীণ হয়ে আছেন।
এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন, খায়রুল কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ, সাবেক সাংসদ আক্তারুজ্জামান, মহানগর বিএনপির উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের রফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।