প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, বাংলাদেশের প্রতি তার সমর্থন ও ভালোবাসার জন্য আমরা তাকে স্মরণ করব।
প্রথম মুখার্জি স্মারক বক্তৃতায় প্রচারিত একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, প্রণব দাদা ছাড়া এক বছর অতিবাহিত করা কঠিন ছিল। তিনি বাংলাদেশের একজন সত্যিকারের বন্ধু এবং উপমহাদেশের একজন মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আমি তার মৃত্যুবার্ষিকীতে এই মহান ব্যক্তিত্বের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের জন্য প্রণব দাদার বুকে ছিল গভীর ভালোবাসা। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তার যে অবদান, আমরা তা কোনোদিন ভুলব না।”ভারতের এই সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রণব মুখার্জি লিগ্যাসি ফাউন্ডেশনের (পিএমএলএফ) আয়োজনে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে দেওয়া স্মারক বক্তৃতায় এ কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক এবং ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংও এই উপলক্ষে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন।শেখ হাসিনা বলেন, ‘শ্রী প্রণব মুখার্জির মৃত্যু উপমহাদেশে বুদ্ধিভিত্তিক তথা রাজনৈতিক অঙ্গনে শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। তিনি (মুখার্জি) আমাদের এই অঞ্চলের আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, “প্রণব দাদাকে ছাড়া একটি বছর অতিবাহিত করা কঠিন ছিল। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একজন সত্যিকারের বন্ধু, ভারতীয় উপমহাদেশের একজন মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মৃত্যুবার্ষিকীতে এই মহান ব্যক্তিত্বের স্মৃতির প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন তরুণ সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি আমাদের সমর্থনের জন্য সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশের স্বীকৃতির জন্য ১৯৭১ সালের জুন মাসে রাজ্যসভায় একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বাংলাদেশের জনগণ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তার সমর্থনের কথা স্মরণ করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ছিল প্রণব মুখার্জির গভীর সম্মান ও শ্রদ্ধা।
২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রণব মুখোপাধ্যায় একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে সব মহলেই ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্র। পাঁচ দশকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় তার কেটেছে ভারতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে।
তার অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে ভারতরত্ন প্রদান করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অমূল্য অবদানের জন্য ২০১৩ সালে তাকে আমাদের পক্ষ থেকে মর্যাদাপূর্ণ সম্মান ‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ প্রদান করা ছিল আমাদের সম্মানের বিষয়।
তিনি বলেন, ভারতরত্ন প্রণব মুখার্জি একটি বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন এবং তিনি তার অসাধারণ প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। তার বহুমুখী প্রতিভা দিয়ে তিনি দক্ষতার সঙ্গে ভারত সরকারের অর্থ, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার অসাধারণ গুণাবলীর কারণে তিনি শেষ পর্যন্ত দেশের প্রথম নাগরিক এবং ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। স্মৃতিচরণ করে তিনি বলেন, প্রণব মুখার্জী ও তার স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জী সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল এবং অনেক স্মৃতি রয়েছে। শুভ্রা মুখার্জী বাংলাদেশি ছিলেন। প্রণব দাদা এবং শুভ্রা দিদি আমার এবং আমার বোন শেখ রেহানার প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল।
গতবছর বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পাওয়ার পর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তার শরীরে করোণাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এক পর্যায়ে তিনি চলে যান গভীর কোমায়। ২০২০ সালের ৩১ অগাস্ট তার মৃত্যু হয়।