বরিশালের প্রশাসন এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের মধ্যে সৃষ্ট সংকটের সমাধান হতে চলেছে। রোববার রাতে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদলের আহ্বানে তার সরকারি বাসভবনে উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বিরাজমান পরিস্থিতি সমাধানে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সমঝোতা বৈঠকে অংশ নেয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস রাত ১২টায় বাংলা ম্যাগাজিনকে জানান, যেটুকু দেখেছেন এবং জেনেছেন আপাতত ওই পর্যন্তই। এর বেশি তিনি এই মুহূর্তে কিছু বলতে অস্বীকার জানিয়েছেন। তবে প্রশাসন ও মেয়রের বৈঠকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় আলোচনার ঝড় বইছে। এ বিষয়ে ইউএনও মুনিবুর রহমান জানান, এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।
সূত্র জানায়, সভায় নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত হচ্ছে বুধবার রাতের ঘটনার রেশ আর সামনে আগাবে না। গ্রেপ্তার হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জামিনেরও বিরোধীতা করা হবে না। প্রশাসনও তাদের মনোভাব থেকে নিজেদের সংযত করবেন। এছাড়াও গ্রেপ্তার অভিযানও বন্ধ রাখা হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা জানিয়েছেন, প্রক্রিয়াগতভাবে মামলার ফয়সালা হবে। আশা করি প্রশাসনের মামলা দুটি প্রত্যাহার হবে। আর আমাদের তরফ থেকে দায়ের করা মামলার বিষয়ে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।
বৈঠকে বরিশলে সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল, ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান, পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান, পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন, জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
এদিকে এ সমঝোতা বৈঠকের পর মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রতিবাদে বরিশাল চেম্বার এবং সিটি কাউন্সিলরদের আহ্বান করা সোমবারের সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। সভায় অংশ নেয়া আরেকজন রাজনৈতিক নেতা বলেন, বরিশালের মঙ্গলের জন্য যা যা করা দরকার তা আমরা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে তা করেছি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাসভবনে হামলার অভিযোগে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করে বরিশাল নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছিলেন ইউএনও মুনিবুর রহমান। নালিশি আবেদন করার সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের শতাধিক আইনজীবী আদালতে হাজির ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৮ আগস্ট বুধবার রাত ১০টায় সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের পক্ষে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করতে যান সিটি করপোরেশনের কর্মী পরিচয়ে একদল যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতা। এ সময় অনুমতি ছাড়া সরকারি দপ্তরে প্রবেশে বাধা দেন কর্তব্যরত আনসার সদস্যরার। এক পর্যায়ে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনিবুর রহমান সেখানে উপস্থিত হলে তার সঙ্গে তর্কে জড়ান যুবলীগ ছাত্রলীগের কর্মীরা। এক পর্যায়ে তারা ইউএনওর বাসভবনে ঢুকে হামলার চেষ্টা চালালে আনসরার সদস্যরা গুলি করেন। এ নিয়ে রাত ২টা পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলাতেই এক নম্বর আসামি করা হয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে।পরে ২০ আগস্ট এ হামলার ঘটনায় সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
এদিকে ২১ আগস্ট বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান পরিচ্ছন্নকর্মীরা। দাবি মানা না হলে তারা নগরীর ময়লা-আবর্জনা (বর্জ্য) পরিষ্কার করবেন না বলে হুমকিও দেন।
আর এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনও করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, সংঘর্ষের এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। বিচারে দোষী হলে প্রয়োজনে দলীয় পদ ছেড়ে দেব। কিন্তু দলের ক্ষতি হতে দেব না।