পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আফিম উৎপাদনক্ষেত্র তালেবানদের
বৈশ্বিক আফিম ও হেরোইন সরবরাহের ৮০ শতাংশেরও বেশি আসে আফগানিস্তান থেকে।বিপুল অংকের এ মাদক বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ প্রধানত তালেবানদের হাতে। গত দুই দশকে তালেবানদের আয়ের এ উৎসে বারবার আঘাত হানার চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।যদিও তাতে সামান্যতম সফলতাও আসেনি।এখনো গোটা বিশ্বে আফিমজাত মাদকের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী তালেবানরাই।
যুক্তরাষ্ট্রের আফগান বিপর্যয় ও তালেবানদের বিদ্যুতগতির সাফল্যের অন্যতম বড় অনুঘটক হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে মাদক বাণিজ্যকে।২০১৭ সাল পর্যন্ত দেড় দশকে ওয়াশিংটন ৮৫০ কোটি ডলারের বেশি ব্যয় করেছে শুধু তালেবানদের আফিম ও হেরোইন বাণিজ্য বন্ধের জন্য। এজন্য পপিক্ষেত ধ্বংস থেকে শুরু করে বিমান হামলা, সন্দেহভাজন ল্যাবে অভিযান চালানোসহ সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন সৈন্যরা। তার পরও এ মাদকের সরবরাহ চেইনে সামান্যতম ভাঙন ধরানো সম্ভব হয়নি। বরং দিন দিন তা আরো সম্প্রসারিত হয়েছে। আফগানিস্তানে তাদের ক্ষমতা দখলের ধারাবাহিকতায় পৃথিবীজুড়েই মাদক সমস্যা আরো মারাত্মক আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
কাবুলের পতনের পর গোটা আফগান অর্থনীতিতে চরম মাত্রায় ধস নেমেছে।আসন্ন দিনগুলোয় দেশটিতে মারাত্মক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকরা। গৃহযুদ্ধের কারণে এরই মধ্যে দেশটিতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে অসংখ্য মানুষ। অদূরভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরো বাড়ার জোর আশঙ্কা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়ে পড়া এ আফগান নাগরিকদের দুরবস্থার সুযোগ নিতে পারে তালেবানরা। তাদের নিয়োজিত করা হতে পারে মাদক উৎপাদন ও বাণিজ্যের সঙ্গে।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মধ্যেই আফগানিস্তানের আফিম বাণিজ্যের পরিমাণ দেশটির মোট জিডিপির ৬ থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে দাঁড়ায় ওই বছরেই আফগান মাদক বাণিজ্যের আকার দেশটির পণ্য ও সেবার বৈধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেও ছাড়িয়ে যায়। একই দপ্তরের সাম্প্রতিক আরেক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালেও আফগানিস্তানে পপি (আফিম) চাষ হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এরপর গত বছর দেশটিতে আফিম আবাদি এলাকার পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। ২০২০ সালে আফগানিস্তানে আফিম চাষ হয়েছে মোট ২ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে। আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দেশটি থেকে অবধারিতভাবেই বিশ্বব্যাপী আফিম ও হেরোইনের সরবরাহ বাড়তে যাচ্ছে।
এছাড়া আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে বৈদেশিক অনুদাননির্ভরতা অনেক বেশি।তালেবানদের কাবুল দখলের ধারাবাহিকতায় এ অনুদানের বড় একটি অংশ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে তালেবানরা আয়ের জন্য নিশ্চিতভাবেই মাদক বাণিজ্যের ওপর আরো নির্ভরশীল হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তালেবানরা ছাড়াও আফগানিস্তানে এখন সশস্ত্র আরো অনেক পক্ষ সক্রিয় রয়েছে।বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা ছাড়াও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকেন্দ্রিক মিলিশিয়া নেতা ও দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তারাও উপরি উপার্জনের খোঁজে মাদক পাচার কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে দেশটিতে মাদক বাণিজ্য প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়ার জোর সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মানিকন্ট্রোলে প্রকাশিত এক নিবন্ধে সাংবাদিক প্রবীণ স্বামী জানাচ্ছেন, মাদক ব্যবসা এখন আফগান অর্থনীতির প্রকৃত মেরুদণ্ড হয়ে উঠছে।২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তালেবানদের মোট আয়ের অর্ধেকই এসেছে মাদক ব্যবসা থেকে। এজন্য নারকোটিক ফসল উৎপাদন ও চাষাবাদ, এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং মধ্য এশিয়ার ভেতর দিয়ে অপরাধীনির্ভর সরবরাহ রুটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়েছে তাদের। এখন তাদের হাতে আগের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতা। স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণের এ প্রকৃত সুযোগকে কাজে লাগাবে তারা।