সে এক নাটকীয় দৃশ্য। বলতে পারেন, হলিউডের যুদ্ধবিষয়ক ছবির দৃশ্যের মতো। কোনো কোনো অর্থে তাকেও সোমবার অতিক্রম করে গেছে আফগানিস্তানের কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। মানুষ রুদ্ধশ্বাসে ছুটছে রানওয়েতে। বিমানবন্দরের টারমাকে দাঁড়িয়ে আছে একটি উড়োজাহাজ। উড়োজাহাজটিতে উঠতে শত শত আফগানের জটলা। সবাই উড়োজাহাজে উঠতে মরিয়া। উড়োজাহাজটিতে ওঠার সিঁড়িতে চলছে হুড়োহুড়ি। কে আগে উঠবেন, তা নিয়ে ধাক্কাধাক্কি। অনেকে আবার এর ধার ধারেননি। সিঁড়ির রেলিংয়ে ঝুলেই পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন উড়োজাহাজের দরজায়।
ঢাকার রাস্তায় চলা বাসে বাদুরঝোলা হয়ে যেভাবে মানুষ যাত্রা করেন, অনেকটা তেমনি দৃশ্য কাবুলের রানওয়েতে যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারফোর্স সি-১৭ বিমানের। মানুষ পঙ্গপালের মতো বিমানটিকে ঘিরে ধরেছে। পাখার নিচে, যে যেখানে পা রাখার মতো সুযোগ পেয়েছেন, সেভাবেই তাতে চড়ে বসেছেন। গতিময় বিমানের সামনে, সঙ্গে, পিছনে তারপরও দৌড়ে ছুটছে মানুষ।
এর আগে তালেবান কাবুল দখলের পর থেকেই জনস্রোত দেখা গেছে কাবুল বিমানবন্দরে। দেশ ছাড়তে যেকোনো উপায়ে একটি উড়োজাহাজে উঠতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন শহরের বাসিন্দারা। লোকজনের চাপ সামলাতে সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মার্কিন সেনারা আজ ফাঁকা গুলি চালিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। কাবুল বিমানবন্দরে অবস্থান করা এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি এখানে খুব ভয়ের মধ্যে রয়েছি। তাঁরা (মার্কিন সেনা) অনেক ফাঁকা গুলি চালিয়েছে।’
আর বিমানের ভিতরের দৃশ্য তো বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানে ছবিতে যে দৃশ্য দেখতে পাচ্ছেন, তা ওই বিমানের ভিতরের। তারা বিমানটিতে উঠার সিঁড়ি, মেঝে, যে যেখানে পেরেছেন- উঠে পড়েছেন। গাদাগাদি করে কোনোমতে শরীরটি প্রবেশ করিয়ে দিতে পারলেই হলো। এমনই ভাবে আকাশে পাখা মেলেছে ওই বিমান। ক্রুরা তাদেরকে নিয়ে এভাবেই উড়ার সিদ্ধান্ত নেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ক খবরের ওয়েবসাইট ডিফেন্স ওয়ানে এসব কথা বলা হয়েছে। ওই বিমানে মোট ৬৪০ জন মানুষকে বহন করা হয়েছে। এ যাবত সি-১৭ বিমানে এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যক যাত্রী বহন। তবে বিমানটি আকাশে পাখা মেলার পর মধ্যাকাশে তা থেকে ছিটকে পড়েন একজন। তাও ভিডিওতে দেখা গিয়েছে। সোমবার এটা ছিল গা শিউরে উঠার মতো এক দৃশ্য।
সেদিন বিমানবন্দরে অবস্থান করছিলেন আফগানিস্তানের মার্কিন দূতাবাসের কর্মীরাও। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য সেখানে মার্কিন সেনাদের মোতায়েন করা হয়েছিলো।