পুঁজিবাজারে আবারও রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হয়েছে।সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচকের বড় উত্থানে শেষ হয়েছে লেনদেন। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৬ হাজার ৭৪৮ পয়েন্টে। সূচকটির ইতিহাসে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হওয়ার পর এটিই সর্বোচ্চ অবস্থান। অন্যদিকে আজ ডিএসইতে টাকার অংকে লেনদেনের হয়েছে গত সাড়ে ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে।ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সোমবার (১৬ আগস্ট) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দুই হাজার ৯৫৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে। এটি পুঁজিবাজারের ইতিহাসে একদিনে ডিএসইতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন এবং আগের সাড়ে ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন।
প্রতিটি ব্যাংকের শেয়ারবাজারে তাদের বিনিয়োগসংক্রান্ত তথ্য দিনে দিনে জানাতে হবে-বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নির্দেশনার আতঙ্কে ছিল পুঁজিবাজার। আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন নির্দেশনায় শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে তেমনটাই ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু উল্টোচিত্র দেখা গেছে পুঁজিবাজারে। সূচকের ব্যাপক উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনেরও হয়েছে রেকর্ড। সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে আজ ১৬ আগস্ট পুঁজিবাজারে শত কোটি শেয়ার লেনদেন করে যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ডে পরিণত হয়েছে। মূলত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের(বিএসইসি)মার্জিন ঋণের নতুন নির্দেশনা বাজার ভালো রাখতে সহায়তা করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ডিএসইতে ৩ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা শেয়ার কেনাবেচা হয়। যা পুঁজিবাজারের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ আর্থিক লেনদেন। এছাড়াও গত ৯ আগস্ট ২ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা এবং গত ১০ আগস্ট ডিএসইতে ২ হাজার ৮৪০ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন হয়েছে।
জানা যায়, আজ ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ০.৭৪ শতাংশ বা ৪৯.৫৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৬ হাজার ৭৪৮.৯২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৯.৮০ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৪৬৮.৮৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ০.০৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ২ হাজার ৪২৭.৬২ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৭৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২০৪টির, কমেছে ১৪৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টির। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে আজ ৫৪.৪০ শতাংশ শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়েছে। সারাদিনে ডিএসইতে ১০১ কোটি ৪৬ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬৩ শেয়ার ৩ লাখ ৮০ হাজার ৫৪ বার হাতবদল হয়। আর দিন শেষে লেনদেন হয় ২ হাজার ৯৫৩ কোটি ৯২ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।
আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি ডিএসইতে সূচক ও বাজার মূলধনেও নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এদিন ডিএসইএক্স ইনডেক্স আগের দিনের তুলনায় ৪৯ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৭৪৮ পয়েন্টে উঠে আসে। এটি ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ডিএসইএক্স ইনডেক্সটি ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট থেকে যাত্রা শুরুর পর সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান।সূচকের পাশাপাশি ডিএসই’র বাজার মূলধনেও নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। দিনশেষে ডিএসইর বাজার মূলধন প্রথমবারের মতো ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এটি পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাজার মূলধন।
দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হয়েছে ১১৬ কোটি ২২ লাখ ৮ হাজার ৯১২ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় ২৫ কোটি টাকা বেশি। দিনটিতে সিএসইর লেনদেনে অংশ নেয়া ৩২০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৭০টির। কমেছে ১২৬টি কোম্পানির। অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দর।
অন্যদিকে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৩৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৯ হাজার ৬৫০২ পয়েন্টে। সিএসই-এক্স সূচক ৭৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১১ হাজার ৭৭৭ পয়েন্টে। সিএসই-৩০ সূচক ১৬৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৫৫৭ পয়েন্টে। সিএসই-৫০ সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে এক হাজার ৪২৫ পয়েন্টে। সিএসআই ১১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে এক হাজার ২৪৯ পয়েন্টে।
আজ ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি শেয়ার লেনদেন করেছে বেক্সিমকো লিমিটেড। কোম্পানিটি আজ মোট লেনদেন করেছে ১৪৮ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এছাড়াও লেনদেনে এগিয়ে রয়েছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, আইএফআইসি ব্যাংক, সাইফ পাওয়ারটেক, মালেক স্পিনিং, কেয়া কসমেটিক্স, ইসলামিক ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স এবং ড্রগন সুয়েটার লিমিটেড।