পর্নোগ্রাফির জগৎঃ মুম্বাইয়ের রাজ কুন্দ্রা আর ঢাকায় রাজ
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও পর্নোগ্রাফি আইনে করা দুই মামলায় গ্রেফতার হন প্রযোজক ও রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার নজরুল ইসলাম রাজ। এ মামলায় বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন রাজ। গত বুধবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর বনানীর রাজের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব সদস্যরা। এসময় তার বাসা থেকে মাদক ও সীসা সেবনের সরঞ্জাম সহ বিকৃত যৌনাচরণের উপকরণ জব্দ করে র্যাব।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ভাষ্যমতে, ভারতীয় চিত্রনায়িকা শিল্পা শেঠীর স্বামী রাজ কুন্দ্রার মতোই পর্নোগ্রাফির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ। ইতোমধ্যেই পর্নোগ্রাফির বিষয়ে র্যাবকে তথ্য দিয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনির এই ঘনিষ্ঠজন।
সূত্র জানায়, রাজের বনানীর বাসাতে পর্নোগ্রাফি তৈরি কনটেন্ট পাওয়া গেছে। বিশেষ করে তার প্রোডাকশন হাউজের মাধ্যমে যারা মডেল বা অভিনেত্রী হতে ইচ্ছা প্রকাশ করতেন, তাদের সঙ্গে রাজ কোনো না কোনোভাবে শারীরিক সম্পর্ক করতেন। তাদের অনেককে তিনি বাধ্য করতেন। আবার স্বেচ্ছায়ও অনেকে তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতেন। এসব কাজের দৃশ্য গোপনে ভিডিও করে রাখতেন তিনি।
নজরুল ইসলাম রাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তার সঙ্গে রাজ কুন্দ্রাকে মিলিয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজ কুন্দ্রা পর্নোগ্রাফির অভিযোগে মুম্বাই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। এ ঘটনায় ভারতসহ বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনা চলছিল। ঠিক তার কয়েকদিন পরই গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশের নজরুল ইসলাম রাজকে। দুজনের নামেই রয়েছে রাজ শব্দটি। দুজনেই অবৈধ পর্নোগ্রাফির সঙ্গে যুক্ত। দুজনেই পর্নোগ্রাফি তৈরির রাজা। দুজনেই প্রায় কাছাকাছি সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন।
এর আগে গত ১৯ জুলাই পর্নোগ্রাফিক চলচ্চিত্র তৈরি ও একটি অ্যাপের মাধ্যমে সেগুলো সরবরাহ করার অভিযোগে শিল্পা শেঠির স্বামী ও ব্যবসায়ী রাজ কুন্দ্রাকে গ্রেফতার করে মুম্বাই পুলিশ। এরপরই বেড়িয়ে আসে রাজ কুন্দ্রার বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য। পর্নোগ্রাফির ভিডিও বানিয়ে একটি অ্যাপের মাধ্যমে সরবরাহ করতেন তিনি।
রিমান্ডে থাকা রাজ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, কীভাবে পর্নোগ্রাফির জগতে প্রবেশ করলেন তিনি। কীভাবে কাদের দিয়ে এই পর্নোগ্রাফি তৈরি করতেন। দেশে-বিদেশে কোন হোটেলে থাকতেন, কোন কোন মডেলকে কীভাবে ব্যবহার করা হতো, সবই বলেছে রাজ।
অভিযান সম্পর্ক জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সারাবাংলাকে বলেন, অভিজাত এলাকাকেন্দ্রিক এসব চক্রের মূল হোতা রাজ। তার মোবাইলে অনেক পর্ন ভিডিও পাওয়া গেছে। বিকৃত যৌনাচারের কিছু উপকরণও তার বাসা থেকে জব্দ করা হয়। এ ছাড়া রাজের ছায়াতলে থাকা অন্যদের ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
তদন্ত সংশ্নিষ্ট একটি সূত্র জানায়, উঠতি মডেলদের নানা টোপ দিয়ে ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার মূল হোতা হলেন প্রযোজক রাজ ও রয়েল খান। রাজ গ্রেফতার হলেও রয়েল এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। সুন্দরী উঠতি কোনো মডেলের দিকে নজর পড়লেই তারা প্রলোভনের ফাঁদ পাততেন। এরপর তাদের রাতারাতি দামি গাড়ি ও গহনাসহ বিলাসবহুল জিনিসপত্র উপহার পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন। বিনিময়ে তাদের কথা মতো ওই প্রভাবশালীদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর প্রস্তাব দেন। অনেকেই এই ফাঁদে পা দিতেন।
জানা গেছে, মডেলদের বিদেশে নিয়ে অনৈতিক কারবারে জড়ানোর হোতাদের তালিকায় আরও আছেন জুনায়েদ করিম জিমি ও শরফুল হাসান ওরফে মিশু। এই চক্রটিকে অর্থ দিয়ে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করতেন চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত এক শিল্পপতি। র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসান তাদের ম্যানেজ করতেন। কাকে কোথায় পাঠাতে হবে তার দায়িত্বও ছিল জিসানের।
রাজ জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানিয়েছে অবৈধপথে স্বর্ণ চোরা কারবারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ওরফে সোনা রফিকের সঙ্গে তার সখ্য রয়েছে। রফিকের সঙ্গে রাজের সম্পর্কের সূচনা বছর ছয়েক আগে।
সোনা চোরাকারবারি করে অঢেল অর্থ উপার্জনের পর রংধনু ক্রিয়েশনস নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন রফিক। সেই রংধনু ক্রিয়েশনসের অফিসে উঠতি বয়সী তরুণীদের এনে নানাভাবে নির্যাতন করা হতো বলে তথ্য দিয়েছেন রাজ। নির্যাতিত তরুণীদের কেউ কেউ সহযোগিতার জন্য রাজের দ্বারস্থ হতেন। কিন্তু রাজের সঙ্গে রফিকুলের সম্পর্ক যে গলায় গলায় তা বুঝতেন না ভুক্তভোগী তরুণীরা। ফলে সোনা রফিকের খপ্পড়েই থাকতে হতো তাদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাজ যেসব উঠতি মডেলকে টোপ দিয়ে ফাঁসিয়েছেন, তার একটি তালিকাও গোয়েন্দারা হাতে পেয়েছেন। সেখানে দুই শতাধিক নাম রয়েছে। ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে তিনি পর্নো ভিডিও তৈরি করছিলেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া তার আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশনে শটগান সোহেল ওরফে সোহেল শাহরিয়ার নামে আরেকজনের ব্যাপারেও চলছে অনুসন্ধান।