দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের অর্ধেকই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। গত দুই মাসে ঢাকা বিভাগে মৃত্যু কিছুটা বেড়েছে। এ দুই মাসে মৃত্যু বেড়েছে খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগেও। অন্যদিকে এ সময়ে মৃত্যু কমেছে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণে ঢাকা বিভাগে মৃত্যু বেড়েই চলেছে। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট ২৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগেই মারা গেছেন ১০৫ জন, যা মোট মৃত্যুর ৪৪.৩০ শতাংশ। গত এক সপ্তাহের মধ্যে তিন দিন ঢাকা বিভাগে শতাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত ৭ আগস্ট ১০১ জন ও ৮ আগস্ট ১০৫ জনের মৃত্যু হয় ঢাকায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকাল শুক্রবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৫ হাজার ৯৩ জন। গতকাল পর্যন্ত দেশে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৭৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩৮৩ জনের। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯৩২ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ৬৭ হাজার ২৪ জন।
মহামারীর দেড় বছরের মধ্যে আর কখনো কোনো বিভাগে এক দিনে শতাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৪ জন, সিলেট বিভাগে ২৩ জন, খুলনা বিভাগে ২০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১০ জন, বরিশাল বিভাগে আটজন ও রংপুর বিভাগে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা জেলায়ই মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের, যা অন্য যে কোনো বিভাগের মৃত্যুর চেয়ে বেশি। মৃত্যু ঢাকায় বেশি হলেও গত ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ শনাক্তের হার ছিল ময়মনসিংহ বিভাগে ২৯.১২ শতাংশ।
গত বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই দেশে সর্বাধিক রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। পরবর্তীতে অন্যান্য বিভাগে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। টিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর ঢাকায় মৃত্যু কমতে থাকে। গত ৮ মে দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের পর সীমান্তবর্তী খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগে বেড়ে যায় মৃত্যু। জুনের শেষদিকে দৈনিক মৃত্যুর দিক থেকে ঢাকাকে ছাড়িয়ে যায় খুলনা বিভাগ। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আবারও ঢাকায় মৃত্যু বাড়তে শুরু করে। বর্তমানে দৈনিক ৪০ শতাংশের বেশি মৃত্যু হচ্ছে ঢাকায়।
কোভিড-১৯-এ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করা হয় গত ১৮ মার্চ। শুরুর দিকে প্রায় এক মাস মৃত্যু ছিল অনিয়মিত ঘটনা। গত ৪ এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রতিদিন দেশে করোনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কখনো মৃত্যু টানা কমতে দেখা যায়নি। মৃত্যুর সংখ্যা নিয়মিত ওঠানামা করতে দেখা গেছে। মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া ব্যক্তিদের অর্ধেক, অর্থাৎ ৪৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। প্রায় ২ মাস আগে ১ আগস্ট পর্যন্ত যা ছিল ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
ঢাকার পরে করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। মোট মৃত্যুর ২০ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে এ বিভাগে। তবে গত দুই মাসে চট্টগ্রামে মৃত্যু কমেছে। ১ আগস্ট পর্যন্ত দেশের মোট মৃত্যুর ২৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ ছিল চট্টগ্রামে।