অপরাধরাজধানী

মামা-ভাগনের নারী পাচারের ভয়ংকর ফাঁদ

মামা-ভাগনের নারী পাচারের ভয়ংকর ফাঁদ, নিখোঁজ অনেকেই। রাজধানীর পল্লবীতে ভয়ংকর নারী পাচারকারী চক্রের সন্ধান মিলেছে। এ চক্রের ফাঁদে পড়ে নিখোঁজ হয়েছেন অনেক নারী। তাদের ফেরত পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আকুতি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। 

জানা গেছে,  চলতি বছর জানুয়ারির  মাঝামাঝি সময় মিরপুর ১২ নম্বর শাহ পরান ক্যাম্পের বাসিন্দা  খুশিকে ভারতে পাচার করে একটি নারী পাচারকারী চক্র।  চক্রের সদস্যরা মিরপুর ১১ নম্বর বাউনিয়বাঁধের বাসিন্দা। মেয়েকে উদ্ধার করতে চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করলেও তা আমলে নেয়নি পুলিশ। বরং মাসের পর মাস থানার বারান্দায় ঘুরতে হয়েছে খুশির মা পারুলকে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর মা পারুল বেগম ৩ আগস্ট মঙ্গলবার উপ পুলিশ কমিশনার কার্যালয়, মিরপুর বিভাগে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। 

গত ৩ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন সংস্করণে ‘‘নারী পাচারকারী চক্র ও এসআই বখতিয়ারে ‘বিষাদময়’ তরুণীর জীবন’’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার পর পল্লবীর ১১ নম্বর বাউনিয়াবাঁধ এলাকা জুড়ে তোলপাড়  শুরু হয়।  পাচারকারী চক্রের হাতে নিখোঁজ হওয়া গৃহবধূ ও তরুণীর নাম একের পর এক উঠে আসে। সূত্র জানায়, প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থা পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করে। 

খুশির মা পারুল বলেন তার মেয়ে খুশিকে (১৮) জানুয়ারির ১৫ তারিখ সন্ধ্যা ৭ টার সময় চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাসা থেকে বের করে নেয় সোহাগ ওরফে নাগিন সোহাগ ও তার মামা কাল্লু (৪০)। ওই দিন রাতেই নাগিন সোহাগ ও তার মামা কাল্লু দু’জনে মিলে তার মেয়েকে সাতক্ষীরায় বিল্লাল নামের এক নারী পাচারকারীর কাছে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে ভারতে পাঠানো হয়।

ঘটনার কিছুদিন পর একটি  অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে খুশি তাকে জানায় সে ভারতে আছে। সে তার মায়ের কাছে বাঁচার আকুতি জানায়।  উপায়ন্তর না দেখে মেয়েকে বাঁচাতে মা নিজেই বিক্রি হয়ে যান পাচারকারী চক্রের কাছে। পাচারকারী চক্রের সদস্য কাল্লুর সহযোগিতায় তিনি ভারত যান।  ভারতের কিশোরগঞ্জের পাঞ্জিপাড়ার একটি পতিতা পল্লী থেকে মেয়ে খুশিকে উদ্ধার করে কয়েকমাস পর তিনি বাংলাদেশে আসেন। 

তিনি বলেন, ওই এলাকা খুব খারাপ। মেয়েদের দিয়ে যৌন কাজ করানো হয়। চারপাশ বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরা। একবার কেউ ঢুকলে সহজে বের হতে পারে না। পারুল বলেন, তিনি সেখানে আমেনা, রুপাসহ আরও ১০-১২ জন মেয়েকে দেখেছেন যারা এক সময় বাউনিয়াবাঁধে ও মিরপুর ১২ নম্বরে বসবাস করত। আরও কত যে মেয়ে উধাও হয়ে গেছে তার খবর নেই। কাল্লু ও নাগিন সোহাগ সবাইকে সেখানে বিক্রি করেছেন। 

স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাফা বলেন, আমার স্ত্রী সাথীকে ৮ মাস আগে একবার ভারতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কাল্লু। সে সময় তাকে আমি নিষেধ করেছি। বলেছি, ভারতে যাইস না, সেখানে গেলে মানুষকে বিক্রি করে দেয়। ১৫ দিন আগে জানতে পারি আমার স্ত্রী সাথীকে ভারতে পাঠিয়েছে কাল্লু। 

তিনি বলেন, কাল্লু অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। হনুফা, শেফালি, রেশমা, লিজা, রোজীসহ আরও অনেককে ভারতে পাচার করেছে। রেশমার স্বামী সাইফুল বউকে না পেয়ে পাগলপ্রায়। তিনি বলেন, থানায় কয়েকবার গিয়েছি মামলা করতে। ভারতে পাচার হয়েছে এ কথা শুনলে পুলিশ মামলা নিতে চায় না। 

মঙ্গলবার রাতে বাউনিয়াবাঁধে আমেনার মায়ের সঙ্গে কথা হয় গণমাধ্যমের। তিনি জানান, তার মেয়ে আমেনাকে ৪ মাস আগে কাল্লু ভারতে পাচার করেন। অথচ মেয়ের পাসপোর্ট ঘরে পড়ে আছে।  যাওয়ার ১৫ দিন পর তিনি তা জানতে পারেন। প্রথম ২ মাস কাল্লু নিজেই বাসায় ৫ হাজার টাকা করে দিতেন। আর বলত মেয়ে ভালোই কামাই করে। অবশ্য গত ২ মাস ধরে টাকা দেওয়া বন্ধ। আর মেয়ের কোনো খোঁজ খবর নাই।  

স্থানীয়রা জানান নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য কাল্লু ও নাগিন সোহাগ সম্পর্কে মামা-ভাগনে। ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে নারী পাচার করে তারা বাউনিয়াবাঁধ  সি-ব্লকে  দু’টি ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। সোহাগ ওরপে নাগিন সোহাগ প্রথমত সহজ সরল ও অসহায় নারীদের টার্গেট করে বিভিন্ন লোভ লালসা দেখান। এরপর ফাঁদে ফেলে বিদেশে পাচার করেন। সোহাগের বিষাক্ত ছোবলে অনেক নারীর জীবন তছনছ হয়েছে। এ জন্য স্থানীয়দের কাছে তিনি নাগিন সোহাগ হিসেবে পরিচিত। 

এ বিষয়ে পল্লবী থানার ওসি পারেভেজ ইসলাম বলেন, আমি ভুক্তভোগীদের বলেছি থানায় আসেন, মামলা নেব। তারা আসেনি।  আর নারী পাচারকারী চক্রের ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।  

Back to top button