৩ বছরে শতাধিক গাড়ি চুরি করেছেন।জিপিএস বিকল করে শতাধিক গাড়ি চুরি করেন তারা।সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা গাড়ি চোরচক্রের সদস্য তারা। টিমে সদস্য সংখ্যা পাঁচ। মুহূর্তেই যেকোনো গাড়ির লক ভাঙা কিংবা বিকল্প চাবি ব্যবহার করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চুরি করে সটকে পড়েন তারা।এরপর গাড়ির মালিককে ফোন করে অর্থ আদায় কিংবা গাড়ি বিক্রি করে দেয় চক্রটি।
চক্রের পাঁচ সদস্যের মধ্যে তিন সদস্য কারাগারে থেকে গাড়ি চুরির পরিকল্পনা করে। এরপর কারাগার থেকে বেরিয়ে তারা গাড়ি চুরি শুরু করেন।গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) দিবাগত রাত থেকে বুধবার (১১ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে গাড়ি চুরি চক্রের পাঁচজনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪)।
চক্রের সদস্যরা এতটাই ধূর্ত যে, গ্রেপ্তার এড়াতে তারা অ্যানড্রয়েড মোবাইলের পরিবর্তে ব্যবহার করেন বাটন মোবাইল। একটি মোবাইল তারা ব্যবহার করেন সর্বোচ্চ পাঁচ দিন। এই পাঁচ দিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে মোবাইলগুলো রেখে আসেন নিজেদের থেকে এক কিলোমিটার দূরে। এই পাঁচজনের মধ্যে তিনজন কারাগারে বসেই গাড়ি চুরির ছক কষে; এরপর কারাগার থেকে বেরিয়ে তারা শুরু করেন একের পর চুরি।
আটকরা হলেন- মো. সোহেল (২৬), মো. সাগর (২৩), মো. সাকিব হোসেন (২৫), মো. হাসান (২৬) ও মো. কামরুজ্জামান (৩৯)। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি পিকআপ, সাতটি টায়ার রিং, দুটি টায়ার, একটি টুলস বক্স, একটি চাবির ছড়া ও সাতটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
সোহেল ও সাগর গত বছর গাড়ি চুরি মামলায় কুমিল্লায় কারাগারে ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তাদের সঙ্গে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার সাকিবের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তারা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে হাসান ও কামরুজ্জামানকে নিয়ে গাড়ি চুরির চক্র গড়ে তোলেন। পার্কিংয়ে থাকা পিকআপই তারা বেশি চুরি করতেন। ড্রাইভার বা মালিকের অনুপস্থিতিতে সুবিধামতো সময়ে বিশেষ কৌশলে গাড়ির লক ভেঙে ও বিশেষ ধরনের মাস্টার চাবি দিয়ে স্টার্ট করে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যেতেন তারা।
আজ বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, আটক সংঘবদ্ধ চক্রটি পরস্পরের যোগসাজশে গত তিন বছর ধরে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিনি পিকআপ চুরি করে আসছিলেন। আটক সোহেল ও সাগর সম্পর্কে আপন ভাই। তারা ঢাকার একটি হাইস্কুল ও নারায়ণগঞ্জের একটি কলেজে পড়াশোনা করতেন। তারা উভয়ই মাদকাসক্ত। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে ও মাদকের টাকা জোগাড় করতেই গাড়ি চুরি শুরু করেন তারা। বিশেষ করে সোহেলের গাড়ি চালানোর দক্ষতা থাকায় পিকআপ গাড়ির লক ভাঙা ও যেকোনো চাবি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করার বিষয়ে তিনি অভিজ্ঞ। এছাড়াও গাড়িতে থাকা ট্র্যাকিং ডিভাইস দ্রুত শনাক্ত করে অকেজো করে দিতে সক্ষম সাগর।
তিনি আরও বলেন, ‘এর বাইরে চোরাই গাড়ির রঙ পরিবর্তন করে ভুয়া নম্বর-প্লেট লাগিয়ে কম দামে সেগুলো বিক্রি করে দিতেন। এই দুই প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হলে গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করতেন তারা।’ তাদের অন্য সহযোগীদের আটকের চেষ্টা চলছে বলেও র্যাব-৪-এর অধিনায়ক জানান।