বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে মেসি
বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে মেসি কাঁদলেন।বার্সেলোনার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। ২১ বছরে ক্লাবটির হয়ে সব ধরনের ট্রফি জিতেছেন। গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড। তিনি ক্লাবটিতে থাকতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু লা লিগার আইনের কারণে তাকে বার্সা ছাড়তে হচ্ছে। ক্যারিয়ারের গোধূলিতে থাকা মেসি মাঠ ও মাঠের বাইরে অসম্ভব ভদ্র এবং বিনয়ী একজন মানুষ। তারকা ফুটবলাররা বেপরোয়া জীবনযাপন করলেও মেসি ছিলেন ব্যতিক্রম। তার জীবনে ছিল তার পরিবার আর ফুটবল।
২১ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে বার্সেলোনা ত্যাগ করছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। সংবাদ সম্মেলনে কথা শুরু করার আগেই কেঁদে ফেলেন মেসি। এরপর বলেন, ‘এভাবে বিদায় নিতে হবে কখনো ভাবিনি। মনে হয় না কেউই ভেবেছে। চেয়েছিলাম মাঠ ভর্তি দর্শকের অভ্যর্থনার মধ্যে বিদায় নিতে।’ আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন মেসি।
ক্যাম্প ন্যুর বাইরে সমর্থকদের ভিড়। আর ভেতরে প্রথম সারিতে মাঝামাঝি তিনটি চেয়ারে বসে মেসির তিন ছেলে। সেখানেই আরেকটি চেয়ারে স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো। তাঁর বার্সেলোনা সতীর্থরা সবাই বসেছিলেন একসঙ্গে। সংবাদ সম্মেলনের কক্ষে ছিলেন সাবেক সতীর্থ জাভি হার্নান্দেজ–কার্লোস পুয়োলরাও। সভাপতি হুয়ান লাপোর্তাসহ ছিলেন ক্লাবের অন্য কর্মকর্তারাও। আর ছিলেন সংবাদকর্মীরা।
মেসি ২১ বছর আগে ১৩ বছর বয়সে বার্সেলোনায় যোগ দেন। গত ১৭ বছর ধরে খেলেছেন ক্লাবের জার্সিতে। এ সময়ের মধ্যে বার্সেলোনার জার্সিতে ৭৭৮ ম্যাচ খেলে ৬৭২ গোল করেছেন। ১০ বার জয় করেছেন লা লিগা। সাতবার জিতেছেন কোপা দেল রে কাপ। এ ছাড়া চারবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, তিনবার উয়েফা সুপারকাপ, তিনবার ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ও সাতবার স্প্যানিশ সুপারকাপ জয় করেছেন মেসি।
গত জুনে বার্সার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকেই ‘ফ্রি এজেন্ট’ ছয় বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা। শৈশবের ক্লাবের সঙ্গেই নতুন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল ৩৪ বছর বয়সীর। কিন্তু লা লিগার বেতন সীমা, ক্লাবের ‘আর্থিক ও কাঠামোগত বাধা’র কারণে এই সুপারস্টারকে দলে ভেড়াতে ব্যর্থ হয়েছে বার্সা। বলতে গেলে দুই পক্ষেরই ইচ্ছের বিরুদ্ধেই এই সম্পর্কের ইতি ঘটল।বার্সেলোনা জানিয়েছিল, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেসিকে ধরে রাখতে পারছে না তারা। মেসিও স্বীকার করে নিলেন, ইচ্ছের বিরুদ্ধেই শৈশবের ক্লাব ছেড়ে যাচ্ছেন তিনি।
মেসি কিছুতেই কান্না আটকে রাখতে পারছিলেন না। কথা বলতে বলতেই আবার কাঁদতে শুরু করেন। আবার থামেন, রুমাল দিয়ে চোখ মুছে নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বলতে শুরু করেন, ‘আমি এ ক্লাবেই বেড়ে উঠেছি। আমি আজ যা, তা এখানে এসেই হয়েছি। কখনো যে এমন দিন আসবে, তা আমি ভাবতেই পারিনি। বার্সেলোনা বিশ্বের সেরা ক্লাব।
বার্সা এবং মেসি উভয় পক্ষ রাজি থাকলেও লা লিগার আইনের কারণে এ বিচ্ছেদ ঘটল। লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবেসের বিরুদ্ধে কোনো রাগ আছে কি না- এমন প্রশ্নে মেসি বলেন, ‘আমি শুধু জানি লা লিগার কারণে এটা সম্ভব হয়নি, ক্লাবের দেনার কারণে সম্ভব হয়নি। ক্লাবের পক্ষে দেনা আর বাড়ানো সম্ভব নয়। তেবাসের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই, তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছেই মাত্র কয়েকবার। প্রতিবারই আলোচনাগুলো বন্ধুত্বপূর্ণই ছিল। তেবাসের সঙ্গে আমার কোনো বিবাদ নেই।’