পরীমনি কেন বেপরোয়া, কার ছত্রছায়ায়।শামসুন্নাহার স্মৃতি (জন্ম ২৪ অক্টোবর ১৯৯২),যিনি পরীমনি নামে অধিক পরিচিত মডেল ও অভিনেত্রী। ২০১৫ সালে “ভালোবাসা সীমাহীন” চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার বড় পর্দায় অভিষেক হয়। রানা প্লাজা (২০১৫) ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তিনি আলোচনায় আসেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল আরো ভালোবাসবো তোমায়, মহুয়া সুন্দরী এবং রক্ত।কিন্তু তিনি সিনেমা বা অভিনয় দিয়ে আলোচনায় থাকেন না।সিনেমা ট্র্যাকের বাইরের ব্যাপার নিয়ে তিনি বেশী আলোচিত।
গত জুন মাসে আশুলিয়ার বোট ক্লাবকাণ্ডে আলোচনায় আসেন ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা পরীমনি। সেসময় তিনি ব্যবসায়ী নাসির ইউ আহমেদসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ করেন। সে অভিযোগ তিনি ফেসবুক লাইভে এসেও জানান। এরপর সাভার থানায় ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তিনি মামলা করেন।
আলোচিত নায়িকা পরীমনিকে মাদকদ্রব্য আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন র্যাবের গোয়েন্দারা। এরই মধ্যে তার কয়েকজন সহযোগীকে গোপন নজরদারির জালে নিয়েছে তারা। পরীমনি কার মাধ্যমে কীভাবে এলএসডি, আইস ও ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করতেন সে চেইন খোঁজা হচ্ছে। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে গোয়েন্দাদের মূল টার্গেট- কোন খুঁটির জোরে পরীমনি এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন, তাদের চিহ্নিত করা।
গত ৮ জুন রাতে বোট ক্লাবে হত্যাচেষ্টা ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে পরীমনির করা মামলা তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। তদন্তকালে পুলিশ জানতে পারে পরীমনির করা অভিযোগ মিথ্যা। প্রভাবশালী আরও এক ব্যক্তির সঙ্গে পরীমনির ঘনিষ্ঠতার তথ্যও জানতে পারে পুলিশ। এমনকি নগ্ন ছবিতে অভিনয়, সমাজের উঁচুতলার মানুষদের ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায়ের তথ্য-উপাত্তও চলে আসে র্যাব গোয়েন্দাদের হাতে।
র্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তারা পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালালেও সেখানে এত বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য পাওয়া যাবে তা তারা অনুমান করতে পারেননি। ওই কর্মকর্তার ভাষ্য, জুনের মাঝামাঝিতে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা করার পর সাংবাদিকরা তার বাসায় গিয়ে নিউজ কভার করার সময় ড্রইংরুমের পাশে কাচঘেরা মিনিবার দেখতে পান। এ নিয়ে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় খবর প্রচারিত-প্রকাশিত হয়। এরপর দেড় মাসেরও বেশি সময় পার হয়েছে। মাদকদ্রব্য রাখার অভিযোগে কয়েকদিন আগে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীর এবং মডেল মৌ ও পিয়াসাকে গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করে। এ অবস্থায় মাদকদ্রব্যসহ অবৈধ কোনো কিছু থাকলে পরীমনি তা দ্রুত বাসা থেকে সরিয়ে ফেলবেন, এমনটাই আশঙ্কা করেছিলেন তারা। তবে সেখান থেকে মাদকদ্রব্য না সরানো এবং অভিযানের শুরুতে পরীমনির উদ্ধত আচরণে তার যে বড় কোনো খুঁটির জোর রয়েছে তা নিশ্চিত হন তারা।
তদন্তে সংশ্লিষ্ট একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, উত্তরারর্ যাব সদর দপ্তরের্ যাবের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা পরীমনিকে বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তার সঙ্গে উচ্চবিত্ত ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার কার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে- তা জানিয়েছেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, গভীর জলের পরীমনি চুনোপুঁটিদের নাম বললেও ক্ষমতার উচ্চ পর্যায়ে যেসব রাঘব-বোয়ালদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে, যারা এতদিন তাকে মূল শেল্টার দিয়েছেন- তাদের নাম গোপন রেখেছেন। তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকলে তারা যে কোনো কৌশলে কিংবা ক্ষমতার দাপটে তাকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন- এমনটা ধরে নিয়েছেন। এ কারণেই হয়তো পরীমনি সহজেই তাদের নাম বলবেন না। তবে পরীমনি গোপন রাখলেও তার আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা প্রভাবশালীদের চিহ্নিত করতে খুব বেশি কঠিন হবে না বলে মনে করেন তদন্তে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
গোয়েন্দাদের ধারণা, রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো বিশেষ ক্ষমতাধর কারও আশ্বাস পেয়েই পরীমনি তার বাসা থেকে মাদকদ্রব্য সরানো কিংবা অন্য কোনো ব্যাপারে সামান্য সতর্ক হননি। বরং আগের মতোই বেপরোয়া ছিলেন। বিগত সময়ের বিভিন্ন ঘটনায় তার হয়তো বিশ্বাস জন্মেছিল, তার বাসায় কখনও অভিযান চালানো হবে না। আর কোনো কারণে তা হলেও এ খবর তিনি আগেভাগেই পেয়ে যাবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পরীমনি বিশেষ ফোনে হোয়াটস অ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার ও ভাইবার ব্যবহার করে ক্ষমতাধর এসব রাঘব-বোয়ালদের সঙ্গে কথা বলতেন। তাই তার নিয়মিত ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিস্টে হয়তো তাদের নাম পাওয়া যাবে না। তবে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এদিকে বুধবার দুপুরে এলিট ফোর্সর্ যাব পরীমনির বাসা ঘিরে ফেলার পর তিনি ও তার সহযোগীরা কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তাদের আদ্যপান্ত খুঁজে দেখছে গোয়েন্দারা। এদের মধ্যে দু’জনকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে। পরীমনির ঘনিষ্ঠজন ও তার গ্রেপ্তারকৃত সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তে সংশ্লিষ্টরা জানতে পেরেছেন, যে কোনো বিপদে পরী সরাসরি তার আশ্রয়দাতা রাঘব-বোয়ালদের ফোন দিতেন না। এজন্য তিনি থার্ড মিডিয়া ব্যবহার করতেন। যে কারণে ক্ষমতাধর ওই ব্যক্তিদের এতদিন শনাক্ত করা যায়নি। তবে এবার অন্তত একজন থার্ড মিডিয়াকে চিহ্নিত করা গেছে। যার মাধ্যমে পরীমনির মূল প্রশ্রয়দাতার কাছ পর্যন্ত পৌঁছানো যাবে বলে আশা করছেন তারা।