যেভাবে পরীমনি-রাজের উত্থান
যেভাবে পরীমনি-রাজের উত্থান।রাজধানীর বনানী থেকে অবৈধ মাদকসহ শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে স্মৃতিমনি ওরফে পরীমনি ও মো. নজরুল ইসলাম ওরফে রাজসহ (৩৯) চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ।এদিন পরীমনি ও পিয়াসার গডফাদার হিসাবে পরিচিত কথিত চলচিত্র প্রযোজক ও অভিনেতা নজরুল ওরফে রাজকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। নজরুলের মোবাইল ফোনে অসংখ্য তরুণীর পর্নো ভিডিও পাওয়া গেছে।
পিরোজপুরের কলেজে (এইচএসসি) জীবনে অধ্যায়ণরত অবস্থায় চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। তিনি ২০১৪ সালে চিত্র জগতে অন্তর্ভূক্ত হন। এ পর্যন্ত তিনি ৩০টি সিনেমা এবং ৫/৭টি টিভিসিতে অভিনয় করছেন। পিরোজপুর থেকে ঢাকায় এসে চিত্র জগতে একটি দৃঢ় অবস্থান তৈরিতে গ্রেপ্তারকৃত মো. নজরুল ইসলাম রাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।হতদরিদ্র ঘরের মেয়ে সামসুন্নাহার ঢাকায় এসে পরীমনি নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। অভিনয়ের তেমন কিছু জানা না থাকলেও একের পর এক সিনেমায় প্রধান চরিত্রে ডাক পড়ে তার।
বছর খানেকের মধ্যে পরীমনি ২০টির বেশি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন। নায়িকা হিসাবে রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি। অঢেল টাকা আর অভিজাত জীবন যেন স্বেচ্ছায় ধরা দেয় তার হাতে।দামি গাড়ি, কোটি টাকার ফ্ল্যাট, মূল্যবান অলঙ্কার কি নেই তার। অথচ তার সমসাময়িক নায়িকাদের অনেকে বাসা ভাড়া দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন।
পরীমনি ২০১৬ সাল থেকে অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়েন। তার ফ্ল্যাট থেকে বিভিন্ন ব্রান্ডের বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন করে থাকেন। মাত্রাতিরিক্ত সেবনের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে বাসায় একটি মিনি বার স্থাপন করেছেন। মিনি বার থাকায় তার ফ্ল্যাটে ঘরোয়া পার্টি অয়োজন পরিপূর্ণতা পেত বলে তিনি জানান।
সিনেমা শুটিংয়ের আড়ালে পরী মূলত প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ হতেই বেশি পছন্দ করতেন। রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেলে তাকে লাস্যময়ী ভঙ্গিতে দেখা যায়। প্রায় প্রতিদিনই গভীর রাত পর্যন্ত পার্টি শেষে মদ্যপ অবস্থায় বের হতেন তিনি।এছাড়া পরী ধূমপানে অভ্যস্ত (চেইন স্মোকার)। তার ফ্ল্যাটে বিদেশি সিগারেট ও মদের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। বলা যায় ছোটখাটো বার। তার ফ্ল্যাট থেকে রাশিয়ান ভদকা, জিন, টাকিলা, হুইস্কি ও বহু মূল্যবান রেড ওয়াইন উদ্ধার করা হয়েছে।
নজরুল ইসলাম রাজ ১৯৮৯ সালে খুলনার একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকায় গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন বলে দাবি করেন। অতঃপর তিনি বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য ও ঠিকাদারী কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি শোবিজ জগতেও তার অনুপ্রবেশ ঘটে। বিভিন্ন সিনেমা/নাটকে তিনি নানান চরিত্রে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে নামে-বেনামে প্রযোজনায় যুক্ত হন। রাজ মাল্টি মিডিয়া নামেও তার একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যবসায়িক জগত ও চিত্র জগতের দুই ক্ষেত্রে তার সংযোগ থাকায় তিনি অতিরিক্ত অর্থ লাভের আশায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিজ অবস্থানের অপব্যবহার করেন।
রাজ গ্রেফতার শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান ও মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানের সহযোগিতায় ১০-১২জন তরুণী নিয়ে একটি অপরাধচক্র তৈরি করে। এই চক্রটি গুলশান, বনানী, বারিধারাসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ডিজে পার্টির আয়োজন করত। এসব পার্টিতে মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম সংঘটিত হতো। এসব পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের থেকে বিভিন্নভাবে মোটা অংকের অর্থ সংগ্রহ করা হতো। এরইমাধ্যমে রাজসহ এই চক্রের সদস্যরা রাতারাতি বিপুল পরিমান অর্থের মালিক বনে যান।
রাজ মাল্টিমিডিয়া নামে এসব অনৈতিক কাজ ও ডিজে পার্টি দিয়ে মাদক ব্যবসার মাধ্যমে যেসব অর্থ উপার্জন করতেন তা নিজের আমদানি, ঠিকাদারি, বালুভরাটসহ বিভিন্ন ব্যবসায় লগ্নি করতেন। তার এসব ব্যবসায় কয়েকজন অর্থের যোগানদাতার নামও বলেছেন রাজ। তার সেসব ডিজে পার্টিতে কারা অংশ গ্রহণ করত, কারা অর্থ সরবরাহ করত যে তথ্য পেয়েছি আমরা। আসামি কর্তৃক দেওয়া তথ্যগুলো তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরীর গডফাদার হিসাবে পরিচিত নজরুল রাজ প্রথমে নামে-বেনামে বিভিন্ন নাটক, সিনেমায় প্রযোজনা করতেন। এটি ২০১৪ সালের ঘটনা। ২০১৮ সালে রাজ তার রাজ মাল্টিমিডিয়া প্রতিষ্ঠা করে। তার এই প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তাতে পরীমনিকাণ্ডে এই প্রতিষ্ঠানের যোগসূত্রিতা পাওয়া গেছে। অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে পর্নোগ্রাফির কনটেন্ট জব্দ করেছে র্যাব।