আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যাহতির পর গ্রেফতার হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শেষ না হতেই এবার আলোচনায় এলেন মনির খান ওরফে দর্জি মনির। যিনি ?‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’ নামে একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকসহ অনেক মন্ত্রী-এমপির সঙ্গে নিজের ছবি সফটওয়্যারের মাধ্যমে এডিট করে নিজের ছবি বসাতেন। এভাবে নিজেকে বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ নামে ভুঁইফোড় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির পরিচয় দিতেন। সেই পরিচয়ে নিজেকে বড় নেতা সাজিয়ে নানাভাবে করতেন চাঁদাবাজি। তিনি সামান্য দর্জি দোকানি থেকে বড় নেতা বনে যাওয়া মনির খান ওরফে দর্জি মনির।
ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গেই মনির খান ওরফে দর্জি মনিরের ওঠাবসার ছবি। কোনো ছবিতে সরকারের সিনিয়র কোনো মন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা বলছেন। কোনোটাতে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছাকাছি বসে আছেন। ফটোশপ কারসাজিতে মহাওস্তাদে পরিণত হওয়া এ দর্জি মনিরের থেকে গোয়েন্দারা যত তথ্য পাচ্ছেন ততই অবাক হচ্ছেন। গোয়েন্দারা বলছেন, ফটোশপ কারসাজিতে এমন পারদর্শী তারা আগে কখনো দেখেননি। তার প্রতিটি ছবিই ফটোশপে কারসাজি করা; যা খালি চোখে দেখে বোঝার উপায়ই নেই।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে জানান, মনির খান প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ব্যক্তির ছবির সঙ্গে নিজের ছবি জুড়ে দিয়েছেন। তিনি অসদুদ্দেশ্যে এসব ছবি ব্যবহার করেছেন। তাকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, ফেসবুক আইডিতে মনির খানের পরিচয় অংশে লেখা আছে ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটিতে সহসম্পাদক ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য হন। এ ছাড়া তিনি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। এর মধ্যে রয়েছে বাংলার রূপসী গার্মেন্টস লিমিটেড, যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। ‘বাংলাদেশ সময় প্রতিদিন’ নামে একটি পত্রিকার প্রধান উপদেষ্টাও তিনি। ফেসবুকে দেখা যায় মনির খানের কাভার ফটোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার একটি ছবি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও কিছু ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে তার ওঠাবসার ছবি দেখা যায়। ভালো করে খেয়াল করলে বোঝা যায় খুব সূ²ভাবে সম্পাদনার মধ্যমে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ছবির জায়গায় নিজের ছবি বসিয়ে সেগুলো প্রচার করছেন মনির খান। ফটোশপে কারসাজি করা এসব ছবির বেশির ভাগেই তার চেহারা অন্যদের তুলনায় বড় দেখাচ্ছে। প্রসঙ্গত, চাকরিজীবী লীগ নামে একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের জন্ম দিয়ে আলোচনায় আসা হেলেনা জাহাঙ্গীরকে ২৯ জুলাই রাতে গ্রেফতারের পরপরই আলোচনা শুরু হয় দর্জি মনিরকে নিয়ে।
মনির এবং তার সহযোগীরা ঢাকা মহানগরীতে এবং বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কমিটি দেওয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকে টাকা নেন। তিনি তার ভুঁইফোড় সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় এবং রাজনৈতিক নেতাদের নাম করে টাকা আদায়, বিভিন্ন চাকরি দেওয়া এবং পদায়নের জন্য অনেক লোকজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন।