গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি।এডিস মশা বাহিত এ রোগটি বিগত কিছুদিন ধরে রাজধানীতে ভয়াবহ মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে, ঢাকাতেই গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৯৪। দেশে প্রতিনিয়ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১৯৬ জন রোগী।চিকিৎসকরা বলছেন, এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এভাবেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে সতর্ক করেন তারা।চলতি বছরে ডেঙ্গুতে এটি একদিনে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তির রেকর্ড বলে আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৯৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৯৪ জন ঢাকার হাসপাতালে ও দুই জন ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।গত বৃহস্পতিবার সারাদেশে মোট ১৯৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ১৮১ জন ছিলেন ঢাকায়।বর্তমানে দেশজুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৭৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী, এরমধ্যে ৭৪৭ জনই রয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে।এবছর দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ২,৬৫৮ জন রোগী, এরমধ্যে ১,৮৭৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।এবছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, সার্বিক মৃত্যুর নিশ্চিত তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল শুক্রবার (৩০ জুলাই) পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা মোট ২ হাজার ৬৫৮ জন। একই সময়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১ হাজার ৮৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী।চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এখন পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে তাদের তথ্য পর্যালোচনা করছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
চিকিৎসকরা বলছেন, গত এক সপ্তাহে প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে রোগী ভর্তির সংখ্যা। কঠোর বিধিনিষেধের সময়ে বাসাবাড়িতে থাকায় এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরাই আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে স্কুল পড়ুয়া বাচ্চারা।শিশুসহ সব বয়সীদের জ্বর দেখা দিলেই করোনা ও ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ বিশেজ্ঞদের। এছাড়া বিপদ চিহ্ন দেখা দিলেই হাসপাতালে নেয়ার তাগিদ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ানুল আহসান বিপুল জানান, বাসায় যদি হাইজিন মেন্টেইন না করি, পরিষ্কার-পরিছন্ন বজায় না রাখি, তাহলে কিন্তু ডেঙ্গুর প্রকোপ দিনদিন বাড়তে থাকবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে পেটে ব্যথা, বমি, মাথা ব্যথা ও ইউরিন আউটপুট কমে যেতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে শিশুকে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।
ডেঙ্গু প্রকোপের এ সময়ে বাসাবাড়িতে অব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্রে পানি জমতে না দেয়া সহ দিনে ও রাতে মশারি টানানোর পরামর্শ বিশেজ্ঞদের।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ:
১। প্রচণ্ড জ্বর
২। তীব্র মাথাব্যথা
৩। বমি
৪। শরীরে লাল র্যাশ ওঠা
৫। মাংসপেশীতে ব্যথা
৬। চোখের পেছনে ব্যথা
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়:
১। মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করা।
২। ঘর ও আশপাশের যে কোনো পাত্রে বা জায়গায় জমে থাকা পানি পরিষ্কার করা যাতে এডিস মশার লাভা বিস্তার না করতে পারে।
৩। ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, নারকেলের মালা, কনটেইনার, মটকা, ব্যাটারি সেল ইত্যাদি প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করা; যাতে এডিস মশা বিস্তার না করতে পারে।
৪। রাতে বা দিনে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা।
৫। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ স্থাপন করা।
৬। মশা নিধনের ওষুধ, স্প্রে কিংবা কয়েল ব্যবহার করা।
৭। জানালাতে মশা প্রতিরোধক নেট ব্যবহার করা।