ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে ১১,৬৪৭টি।বর্তমানে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবগুলোতে আমানত রয়েছে ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ৪৩.০৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মার্চে দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট আমানত ছিল ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালের মার্চে এই আমানত ছিল ১২ লাখ ১০ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। সেই হিসেবে, গত এক বছরে দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট আমানত বেড়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা।১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৫ জন, যা ১৯৭৫ সালে ৪৭ জনে উন্নীত হয়। দেশে কোটিপতিদের সংখ্যা ১৯৮০ সালে ছিল ৯৮ জন, ১৯৯০ সালে ৯৪৩ জন, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২ জন, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭ জন এবং ২০০৮ সালে ১৯ হাজার ১৬৩ জন ছিল।
তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, চলতি ২০২১ সালের মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোতে ১ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত জমা থাকা হিসাব ছিল ৭৪,২২৯টি। পাঁচ কোটি টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানত থাকা ব্যাংক হিসাব ছিল ১০,৪৯৯টি। দশ কোটি টাকা থেকে ১৫ কোটি টাকা জমা থাকা ব্যাংক হিসাব ছিল ৩ হাজার ৪৪৬টি। পনেরো কোটি টাকা থেকে ২০ কোটি টাকা জমা থাকা ব্যাংক হিসাব ছিল ১,৬৯৩টি। ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানত জমা থাকা ব্যাংক হিসাব ছিল ১,০৮১টি।
দেশের ব্যাংকগুলোতে ১ কোটি টাকা বা তার বেশি জমা রয়েছে ৯৪,২৭২টি ব্যাংক হিসাবে। এ তথ্য গত মার্চ পর্যন্ত সময়ের। এই হিসাবগুলোতে জমা ছিল ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। তিন মাস আগে অর্থাৎ গত ডিসেম্বরে কোটি টাকার বেশি আমানত জমা থাকা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ৯৩,৮৯০টি। সেই হিসেবে আলোচিত ৩ মাসে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে ৩৮২টি।এছাড়া গত ডিসেম্বরে কোটিপতি হিসাবগুলোতে আমানতের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ আলোচিত সময়ে ব্যাংকে কোটিপতিদের আমানত বেড়েছে ১ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ করা পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা যায়। প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, ২০২০ সালের মার্চে কোটি টাকার বেশি জমা থাকা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ৮২,৬২৫টি। সেই হিসেবে গত এক বছরে কোটিপতি ব্যাংক হিসাব বেড়েছে ১১,৬৪৭টি। গত বছরের মার্চে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল ৫ লাখ ১৫ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। সেই হিসেবে এক বছরে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবগুলোর জমানো টাকা বেড়েছে ৮০ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে ১১ কোটি ৮৫ লাখ ৫২ হাজার ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। এর মধ্যে ৯৪,২৭২টি ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকার বেশি করে আমানত জমা রয়েছে। অর্থাৎ শূন্য দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ হিসাবে মোট আমানতের ৪৩ শতাংশ জমা রয়েছে।এছাড়া ৭৬৬টি ব্যাংক হিসাবে ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকা করে জমা ছিল। ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা পর্যন্ত জমা ছিল ৩৮৮টি ব্যাংক হিসাবে। ২৯৬টি ব্যাংক হিসাবে ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটি টাকা করে জমা ছিল। ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত জমা থাকা হিসাব ছিল ৫০৪টি। ৫০ কোটি টাকা বা এর বেশি টাকা জমা থাকা ব্যাংক হিসাব ছিল ১,৩৭০টি।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা মহামারীর সংক্রমণ ধরা পড়ে এবং ১৮ মার্চ প্রথম করোনায় মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এ বছর মার্চের শেষ দিকে করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ দেখা দেয়। এই সময়ে দেশে ব্যবসাবাণিজ্য ভয়াবহভাবে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। তবে সরকার অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ হাতে নেয়। এরপরও বেসরকারি খাতে তেমন উদ্দীপনা তৈরি হয়নি। গত মে মাসে বেসরকারি খাতের ঋণে সর্বনিম্ন (৭.৫৫) প্রবৃদ্ধি দেখা দেয়। যেখানে জুন শেষে ১৪.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনা শুরুর প্রথম দিকে মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছিল। কারণ, সবার মধ্যে আতঙ্ক ছিল, কী হয় না হয়। এখন সেটা নেই। তাছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যে টাকা খাটাচ্ছে না। এই টাকাগুলোই ব্যাংকে আসছে আমানত হিসেবে।’
এছাড়া প্রবাসীরাও বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এই টাকাগুলো তো তাদের স্বজনরা পুরোটা খরচ করে ফেলে না। ব্যাংকে জমা করেন। তাছাড়া খরচ করলেও তা অর্থনীতিতেই থাকে বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতির এই গবেষক। উদাহরণ দিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘রেমিট্যান্সের টাকা দিয়ে কোনো প্রবাসীর স্বজন যদি এক খ- জমি কেনেন, জমি বিক্রেতা ওই টাকা নিয়ে ব্যাংকেই তো রাখবে। না হয় কাউকে দেবে কোনো কাজে। এভাবে টাকাটা অর্থনীতির মধ্যেই থাকবে।’