বন্যা হতে পারে জুলাইয়ের শেষের দিকে
বন্যা হতে পারে জুলাইয়ের শেষের দিকে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা ও পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে— বরাবরের মতো এবারও দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা বেশি হতে পারে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি সমতল আগামী ২৫ জুলাই পর্যন্ত স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি পাবে। আগামী সাত দিনে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় বিপৎসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা নেই।চলছে ভরা বর্ষা মৌসুম। বাংলাদেশের ওপরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় কখনো হালকা কখনো ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ মাসে শেষদিকে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে উজানেও। ফলে উজান থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ব্রহ্মপুত্র, যমুনা এবং পদ্মার পানি বেড়ে জুলাইয়ের শেষ দিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
পদ্মা ও গঙ্গা নদীর পানি সমতল আগামী সাতদিন স্থিতিশীল থাকবে। তবে আগামী দশদিন গঙ্গা নদীর অববাহিকায় বিপৎসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা নেই। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে— দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের নিচু এলাকাগুলোতে বন্যা দেখা দিতে পারে। তবে এ বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।এ প্রসঙ্গে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বাংলা ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘জুলাই- আগস্ট বর্ষা মৌসুম। এ সময় যে বৃষ্টি বা বন্যা হয় তা স্বাভাবিক। তবে জুলাইয়ের শেষে এবং আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বন্যার একটা আশঙ্কা থাকে। এটা দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে হয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না দেখা যাচ্ছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী একটা স্বল্প মেয়াদী বন্যা আসতে পারে। তবে তা এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হবে না।’
এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে— জুলাই মাসে স্বাভাবিকভাবেই বৃষ্টিপাত হবে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে দুইটি লঘুচাপ হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। এরমধ্যে একটি বর্ষাকালীন নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।এ প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, জুলাই মাসে শেষের দিকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল, উত্তর পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের কতিপয় স্থানে স্বল্প থেকে মধ্য মেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকার কিছু স্থানে স্বল্প মেয়াদী আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
জুলাই মাসের এই বৃষ্টির পূর্বাভাস আমলে নিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ওই সময়ে ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে নেমে আসা উজানের পানিতে ব্রক্ষ্মপুত্র, যমুনা নদীর পানি বাড়তে পারে। ফলে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ এবং নাটোরের নিম্নাঞ্চলে কিছুটা পানি বাড়তে পারে। তবে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে না।
জুলাই মাসে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবান, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটিতে। এই বৃষ্টিপাতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সংশ্লিষ্টদের সর্তক থাকতে বলা হয়েছে।আবহাওয়াবিদ, মো. হাফিজুর রহমান জানান, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে মোটামুটি সক্রিয়। এটি বঙ্গোপসাগরে দুর্বলভাবে অবস্থান করছে। এ কারণে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ, হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। বর্ধিত পাঁচদিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশের কিছু স্থানে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টির কারণে গঙ্গা নদীর পানি বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে দেশের মধ্যাঞ্চলের রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর এবং চাঁদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা হতে পারে। তবে গঙ্গা নদীর অববাহিকার জেলাগুলোতে বন্যার আশঙ্কা নেই। অন্যদিকে সুরমা, কুশিয়ারা ও মেঘনা অববাহিকার উজানে সারিগোয়াইন, জাদুকাটা, সোমেশ্বরী, কংস, মনু, খোয়াই নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে।