সুরক্ষিত রাখুন আপনার হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্ট

সুরক্ষিত রাখুন আপনার হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্ট।হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও কাজের তথ্য ও নথি আদান প্রদান করেন অনেকেই। তাই নিজের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখা জরুরি।হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য সময়টা একেবারেই ভালো যাচ্ছেনা! একে তো তাদের নতুন প্রাইভেসি শর্তাবলী ও নীতিমালা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই, তার ওপরে হ্যাকারদের হানায় হোয়াটসঅ্যাপের নিরাপত্তা শিকেয় উঠতে চলেছে। একটুও বাড়িয়ে বলছি না, অনেক হোয়াটসঅ্যাপ ইউজার তাদের অ্যাকাউন্ট চুরি যাওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন। মূলত Reddit ও Twitter ব্যবহারকারীরা এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। আসুন এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

সকলেই জানেন যে হোয়াটসঅ্যাপে সাইন-ইন করার জন্য কল এবং এসএমএস গ্রহণে সক্ষম সক্রিয় একটি সিম কার্ড প্রয়োজন। লগ-ইন করার সময় হোয়াটসঅ্যাপ এই নম্বরেই ছয় ডিজিটের ভেরিফিকেশন কোড সেন্ড করে থাকে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারে যেমন পাসওয়ার্ড থাকে, হোয়াটসঅ্যাপের এই ছয় ডিজিটের কোডও ইউজারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপন একটি ডেটা। এই তথ্য কোনভাবেই কারো সাথে শেয়ার করা চলেনা। এই কোড অপরের হাতে গেলে তারা আপনার অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নিতে পারে। বর্তমানে হ্যাকাররা এই পথেই একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ ইউজারদের বোকা বানাচ্ছেন। অবশ্য এক্ষেত্রে চৌর্য্যপটু হ্যাকার ভিন্ন ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করায় তথাকথিত চালাক-চতুর মানুষের পক্ষেও ব্যাপারটা অনুমান করা সম্ভব হচ্ছে না।

আজকাল সব স্মার্টফোনেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ফেস আনলকের মতো বায়োমেট্রিক লকের ফিচার থাকে। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেন। এই বায়োমেট্রিক ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ লক করা সম্ভব।এই জন্য হোয়াটসঅ্যাপের সেটিংস ওপেন করুন। এবার ‘অ্যাকাউন্ট’ সিলেক্ট করে ‘প্রাইভেসি’ তে ট্যাপ করুন। এর পরে অ্যানড্রয়েড ফোনে ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক’ ও আইফোনে ‘স্ক্রিন লক’ অপশন সিলেক্ট করুন। এবার আপনার বায়োমেট্রিক দিয়ে সেট আপ শেষ করুন।এরপর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ওপেন করার জন্য প্রত্যেকবার বায়োমেট্রিক বাধ্যতামূলক হবে। অর্থাৎ অ্যানড্রয়েডে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইফোনে ফেস আনলকের মাধ্যমে আনলক হবে হোয়াটসঅ্যাপ।

প্রতারণার জন্য বহুক্ষেত্রেই হ্যাকাররা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলিকে টার্গেট করছে। এজন্য তারা একই গ্রুপের একাধিক সদস্যকে বেছে নিচ্ছে। বৃহৎ চক্রের মতোই এরা একের পর এক ইউজারের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট গ্রাস করছে।কখনো কখনো ইউজারের ফোনে অতি পরিচিত বন্ধু বা প্রিয়জনের এসএমএস আসছে –“Hey! I had to receive a SMS code from WhatsApp but my phone is unable to receive SMS right now, so I’ve indicated your phone number: can you tell me the code you received?”এবার ইচ্ছে হলে এই আপাত নিরীহ মেসেজটিকে আপনি গভীর আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে কিন্তু নিজের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট ও যাবতীয় প্রাইভেসির মায়া ত্যাগ করতে হবে! কারণ ভেরিফিকেশন কোড পেলে, অ্যাকাউন্ট চুরি করতে হ্যাকারের দু’মিনিট সময়ও লাগবে না। তবে ইতিমধ্যেই আপনার সঙ্গে এমনটা ঘটে থাকলে অযথা বন্ধুর উপর রাগ করবেন না, কেননা আপনার সাথে তিনিও প্রতারণার শিকার হয়েছেন!

হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে এন্ড টু এন্ড ব্যাক আপ থাকলেও চ্যাট ব্যাক আপে কোন এনক্রিপশন থাকে না। গুগল ড্রাইভ অথবা আইক্লাউডে এই ব্যাক আপ সেভ থাকে। তাই আপনার চ্যাট সুরক্ষিত রাখতে হলে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ব্যাক আপ নেওয়া বন্ধ করুন। পরে ব্যাক আপে এনক্রিপশন চালু হলে আবার ব্যাক আপ নেওয়া শুরু করতে পারবেন।

এবার প্রশ্নটা হলো নিজের অ্যাকাউন্টকে সুরক্ষিত রাখার কোন উপায় রয়েছে কিনা। উত্তর – রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের প্রথম পরামর্শ হলো, কোন স্বীকৃতিহীন ওয়েবসাইট থেকে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করার বদলে সব সময় অ্যাপ স্টোর, টেস্ট ফ্লাইট (TestFlight), প্লে-স্টোর বা হোয়াটসঅ্যাপের নিজস্ব ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন। দ্বিতীয়ত, হোয়াটসঅ্যাপের টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন ফিচারটি সক্রিয় (enable) করুন। এটি আপনার অ্যাকাউন্টকে অতিরিক্ত সুরক্ষা প্রদান করবে। আমাদের সর্বশেষ পরামর্শের কথা আমরা আগেই উল্লেখ করেছি – কোন অবস্থাতেই নিজের ছয় ডিজিটের কোড অপরকে জানাবেন না।এছাড়া অ্যাকাউন্ট রিকভার করার জন্যেও নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি রয়েছে। এক্ষেত্রে সবথেকে সরলতম উপায়টি হলো নতুন করে হোয়াটসঅ্যাপে সাইন-ইন করা। এর ফলে হোয়াটসঅ্যাপ অপর ব্যক্তিটিকে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে লগ আউট করে দেবে। অবশ্য হ্যাকার টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন ফিচার সক্রিয় করলে নিজের অ্যাকাউন্টের সম্পূর্ণ অ্যাক্সেস পেতে, আপনাকে অনন্ত সাত দিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। এরপরেই আপনি পুরোনো টু-স্টেপ ভেরিফিকেশনটিকে নাকচ করতে পারবেন যার ফলে আপনার অ্যাকাউন্ট বেদখলে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

Exit mobile version